Wednesday, 9 March 2016

কামাল আতাতুর্ক

অধিকাংশ মুসলমান মনে করেন ইসলাম বিদ্বেষ ও ইসলাম বিরোধীতার অপর নাম কামাল আতাতুর্ক । আসলেই কি তাই! ইতিহাস বলে কামালই একমাত্র মুসলমান যে কিনা ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে ছিলেন । যার কারণে অধিকাংশ মুসলমান কামালকে অপছন্দ করেন । কামালকে অপছন্দ করার একমাত্র কারণ তুর্কী সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম 'ইসলাম' তুলে ফেলেছেন বলে । আসুন জেনে নিই কামালের ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্ক কেমন ছিল:- 1/ তুর্কী নারীদের সামাজিক মর্যাদা প্রদান করেন; 2/ তুরস্কে মুসলমানদের বহু বিবাহ বন্ধ করেন এবং রেজিস্ট্রি বিয়ে চালু হয়; 3/ মেয়েদের বিয়ের বয়স সতের থেকে আঠার করা হয়; 4/ মেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক পোশাক হিজাব ও বোরখা উঠিয়ে ইচ্ছামত পোশাক পরবার অনুমতি দেওয়া হয়; 5/ মেয়েদের জন্য তৈরি করা হয় স্কুল ও কলেজ এবং উচ্চ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়; 6/ মেয়েদেরকে ভোট দেবার অধিকার দেওয়া হয়, যা কিনা মুসলিম বিশ্বে সর্বপ্রথম তুর্কী নারীরা ভোটের অধিকার পায়; 7/ ধর্মশিক্ষাকে নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা চালু করা হয়; 8/ শিশুদের জন্য ইসলামী শিক্ষা নিষিদ্ধ করে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করা হয়; 9/ আরবি অক্ষরের পরিবর্তে রোমান লিপির ব্যবহার শুরু হয়; 10/ সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে রবিবারকে নিষিদ্ধ করা হয়; 11/ সালামের পরিবর্তে হ্যান্ডশেক রেওয়াজ প্রবর্তিত হয়; 12/ আরবী অক্ষরে নাম রাখতে বাধা দেওয়া হয় এবং তুর্কী অক্ষরে নাম রাখতে বলা হয়; 13/ কামালের আমলেই সমগ্র তুরস্কে জুড়ে তৈরি হয় রেলপথ; 14/ বৈদেশিক মৈত্রী চুক্তির স্বার্থে আজারবাইজানকে রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয়; 15/ তুরস্ক লীগ অব নেশনস-এর সদস্য হন । যাতে করে সামরিক দিক থেকে কোন বিপদ না আসে তার জন্য প্রতিদেশী প্রতিটি দেশের সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি করা হয়; 16/ তুরস্কে থাকা খ্রিস্টানদের জন্য সরকারি সহযোগীতায় নতুন নতুন গির্জা স্হাপন করা হয়; 17/ 'বড় দিন' ও 'ইস্টার সানডে'-তে সরকারি ছুটির ব্যবস্হা করা হয়; যাই হোক, কামাল আতাতুর্ক পর পর চারবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন । পরবর্তীতে কামাল মারা গেলে যে লাউ সে কদু । আবার সেই তুরস্ককে ইসলামী চিন্তাধারায় নিয়ে এসে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করেছেন এবং প্রত্যেকটা গির্জা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে । -এবার আসুন বাংলাদেশের দিকে একটু তাকায়:- এরশাদ সরকারের আমলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম 'ইসলাম' করা হয় । যার ফলশ্রুতিতে হাজার হাজার হিন্দু দেশ ত্যাগ করেন । সে বছর অধিকাংশ পূজা মন্ডপে দূর্গা প্রতিমার বদলে ঘট পূজা করা হয়েছিল । পরবর্তীতে ক্ষোধে ফেটে পড়ে আ' লীগ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ । দেশব্যাপী চলে মানববন্ধন আর বিক্ষোভ মিছিল । তারপর রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে উঠিয়ে দিতে মামলা করা হয় । সংখ্যালঘুদের স্বার্থে গঠিত হয় 'বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ' নামক একটি সংগঠন । কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি । একানব্বই ও ছিয়ানব্বইতে খালেদা ও হাসিনা সরকার এসেও এ বিষয়ে আর হাত বাড়াননি । তাদের ধারণা দেশব্যাপী মুসলমানরা বিক্ষোভ করে এবং ভোট কমে যাবে । তুরস্কে কামালের আমলেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে উঠিয়ে দেওয়ার পর দেশ জুড়ে ঝড় বয়ে গেল । শুধু মৌলবাদী ধর্মীয় নেতারা নয়, বিরোধীপক্ষও প্রতিবাদে ফেটে পড়ল । সৈন্যদের মধ্যেও বিদ্রোহের আশঙ্কা দেখা গেল । তারপরেও কামাল আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ করেই ছেড়েছেন । তিনি বললেন, যদি প্রয়োজন হয় পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিতে দ্বিধা করব না । এই হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা । অথচ দেখুন আমাদের শেখ হাসিনা কিন্তু কামালকে ফলো না করেই মুখে মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি আওড়ান । একটা আশার বাণী যে, আটাশ বছর পর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম চ্যালেঞ্জ মামলার শুনানি সাতাশ মার্চ । বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম না থাকার সম্ভাবনা রয়েছে । দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয় । coppyed from নয়ন সাহা

No comments:

Post a Comment