অধিকাংশ মুসলমান মনে করেন ইসলাম
বিদ্বেষ ও ইসলাম বিরোধীতার অপর
নাম কামাল আতাতুর্ক । আসলেই কি
তাই! ইতিহাস বলে কামালই একমাত্র
মুসলমান যে কিনা ধর্মনিরপেক্ষতার
পক্ষে ছিলেন । যার কারণে অধিকাংশ
মুসলমান
কামালকে
অপছন্দ করেন । কামালকে অপছন্দ
করার একমাত্র কারণ তুর্কী সংবিধান
থেকে রাষ্ট্রধর্ম 'ইসলাম' তুলে
ফেলেছেন বলে । আসুন জেনে নিই
কামালের ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্ক কেমন
ছিল:-
1/ তুর্কী নারীদের সামাজিক
মর্যাদা প্রদান করেন;
2/ তুরস্কে মুসলমানদের বহু বিবাহ
বন্ধ করেন এবং রেজিস্ট্রি বিয়ে চালু
হয়;
3/ মেয়েদের বিয়ের বয়স সতের থেকে
আঠার করা হয়;
4/ মেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক
পোশাক হিজাব ও বোরখা উঠিয়ে
ইচ্ছামত পোশাক পরবার অনুমতি দেওয়া
হয়;
5/ মেয়েদের জন্য তৈরি করা হয় স্কুল
ও কলেজ এবং উচ্চ শিক্ষা বাধ্যতামূলক
করা হয়;
6/ মেয়েদেরকে ভোট দেবার অধিকার
দেওয়া হয়, যা কিনা মুসলিম বিশ্বে
সর্বপ্রথম তুর্কী নারীরা ভোটের
অধিকার পায়;
7/ ধর্মশিক্ষাকে নিষিদ্ধ করে
বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা চালু করা হয়;
8/ শিশুদের জন্য ইসলামী শিক্ষা
নিষিদ্ধ করে ইংরেজি শিক্ষায়
শিক্ষিত করা হয়;
9/ আরবি অক্ষরের পরিবর্তে রোমান
লিপির ব্যবহার শুরু হয়;
10/ সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে
রবিবারকে
নিষিদ্ধ করা হয়;
11/ সালামের পরিবর্তে হ্যান্ডশেক
রেওয়াজ প্রবর্তিত হয়;
12/ আরবী অক্ষরে নাম রাখতে বাধা
দেওয়া হয় এবং তুর্কী অক্ষরে নাম
রাখতে বলা হয়;
13/ কামালের আমলেই সমগ্র তুরস্কে
জুড়ে তৈরি হয় রেলপথ;
14/ বৈদেশিক মৈত্রী চুক্তির
স্বার্থে আজারবাইজানকে রাশিয়ার
হাতে তুলে দেওয়া হয়;
15/ তুরস্ক লীগ অব
নেশনস-এর সদস্য হন । যাতে করে
সামরিক দিক থেকে কোন বিপদ না
আসে তার জন্য প্রতিদেশী প্রতিটি
দেশের সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি করা
হয়;
16/ তুরস্কে থাকা খ্রিস্টানদের জন্য
সরকারি সহযোগীতায় নতুন নতুন গির্জা
স্হাপন করা হয়;
17/ 'বড় দিন' ও 'ইস্টার সানডে'-তে
সরকারি ছুটির ব্যবস্হা করা হয়;
যাই হোক, কামাল আতাতুর্ক পর পর
চারবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন ।
পরবর্তীতে কামাল মারা গেলে যে
লাউ সে কদু । আবার সেই তুরস্ককে
ইসলামী চিন্তাধারায় নিয়ে এসে
ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করেছেন এবং
প্রত্যেকটা গির্জা
ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে ।
-এবার আসুন বাংলাদেশের দিকে একটু
তাকায়:-
এরশাদ সরকারের আমলে বাংলাদেশের
রাষ্ট্রধর্ম 'ইসলাম' করা হয় । যার
ফলশ্রুতিতে হাজার হাজার হিন্দু দেশ
ত্যাগ করেন । সে বছর অধিকাংশ পূজা
মন্ডপে দূর্গা প্রতিমার বদলে ঘট পূজা
করা হয়েছিল । পরবর্তীতে ক্ষোধে
ফেটে পড়ে আ' লীগ ও হিন্দু
সম্প্রদায়ের মানুষ । দেশব্যাপী চলে
মানববন্ধন আর বিক্ষোভ মিছিল ।
তারপর রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে উঠিয়ে
দিতে
মামলা করা হয় । সংখ্যালঘুদের
স্বার্থে গঠিত হয় 'বাংলাদেশ হিন্দু
বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ' নামক
একটি সংগঠন । কিন্তু তাতেও
কোন লাভ হয়নি । একানব্বই ও
ছিয়ানব্বইতে খালেদা ও হাসিনা
সরকার এসেও এ বিষয়ে আর হাত
বাড়াননি । তাদের ধারণা দেশব্যাপী
মুসলমানরা বিক্ষোভ করে এবং ভোট
কমে যাবে ।
তুরস্কে কামালের আমলেও রাষ্ট্রধর্ম
ইসলামকে উঠিয়ে দেওয়ার পর দেশ
জুড়ে ঝড় বয়ে গেল । শুধু মৌলবাদী
ধর্মীয় নেতারা নয়, বিরোধীপক্ষও
প্রতিবাদে ফেটে পড়ল । সৈন্যদের
মধ্যেও বিদ্রোহের
আশঙ্কা দেখা গেল । তারপরেও কামাল
আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তুরস্ককে
ধর্মনিরপেক্ষ করেই ছেড়েছেন । তিনি
বললেন, যদি প্রয়োজন হয় পার্লামেন্ট
ভেঙ্গে দিতে দ্বিধা করব না । এই
হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ মুস্তাফা কামাল
আতাতুর্ক পাশা । অথচ দেখুন আমাদের
শেখ হাসিনা কিন্তু কামালকে ফলো না
করেই
মুখে মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি
আওড়ান ।
একটা আশার বাণী যে, আটাশ বছর পর
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম চ্যালেঞ্জ মামলার
শুনানি সাতাশ মার্চ । বাংলাদেশে
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম না থাকার
সম্ভাবনা রয়েছে । দেখা যাক শেষ
পর্যন্ত কি হয় ।
coppyed from নয়ন সাহা
No comments:
Post a Comment