পুণেতে 'হজরত কামার আলি দরবেশ'- এর দরগায় গিয়েছেন? বা মুম্বাই এর হাজী আলি দরগায়? কিংবা আমেরিকা ব্রিটেনের প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী অব্দি যেখানে চাদর পাঠান, সেই খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহ.) এর দরগাতে চাদর চড়িয়েছেন আজমের শরীফে গিয়ে?
আমি গিয়েছি। তিনটিতেই। এবং গিয়েছি বলেই মনে করি, ভারতের মুসলমান কেউ বললে, তার প্রতিচ্ছবি এই জায়গাগুলোই হওয়া উচিত। এটাই ভারতবর্ষের চিত্র হবার কথা যে - পুজো যেমন সার্বজনীন, তাতে যোগ দিতে হিন্দু হতে লাগে না, তেমনি পীরের মাজারে উরস করতে বা চাদর চড়াতে মুসলমান হওয়া লাগে না।
জাকির নায়েকের মত একটি আপাদ্মস্তক শয়তান কিন্তু একটা মেক-আপ, ৮০০ যুবককে তিনি এই ১০-১২ বছরে কনভার্ট করতে পেরেছেন।
কিন্তু আসল কাজটা হচ্ছে তলে তলে। জানেন?
শুনুন।
তবলিগ জামাত। শুনেছেন?
তবলিগ জামাত হল মুসলমান সমাজের ‘শুদ্ধিকরণ’ আন্দোলন। অর্থাৎ ভারতের মুসলমানদের এই পীর বা মাজার শরীফ থেকে মুখ ফিরিয়ে কট্টরবাদী সালাফি - ওয়াহাবি, বা মরুভূমির মতে গড়ে তোলা। যে মতে কাজ করে যাচ্ছেন দেড়শো দেশে প্রায় ৫ কোটি, আজ্ঞে সংখ্যায় ভুল নেই, প্রায় ৫ কোটি প্রচারক। তবলিগি বলা হয় এদের। প্রচারবিমুখ এই সংগঠন প্রায় নিঃশব্দে কাজ করে।
পশ্চিমবঙ্গের জেলা থেকে গ্রাম স্তর পর্যন্ত তবলিগের সংগঠন। কি শিক্ষা দেয় এরা জানেন?
পিরের মাজারে শ্রদ্ধা জানানো ‘শরিকি’ (আল্লার সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক করা), ঘোরতর বে-শরিয়তি, ইসলাম-বিরোধী। এরা শেখায় - খাঁটি মুসলমানের পক্ষে গানবাজনার মতো ‘বেহুদা’ কাজ জায়েজ অর্থাৎ অনুমোদনযোগ্য নয়। পিরের দরগা বা মাজারে শ্রদ্ধা জানানো খাঁটি মুসলমান হয়ে ওঠার পথে অন্তরায়! পুজো কিংবা জন্মদিন পালন করাও যাবে না।
এই নিষেধ কেবল ব্যক্তিগত বিশ্বাসেই আটকে নেই, তা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। এ রাজ্যে মুসলমান পরিচালিত মিশন এবং অন্যান্য যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আছে তার অধিকাংশ জায়গাতেই গান গাওয়া বা শোনা নিষেধ। সেখানে হারমোনিয়াম, তবলা এবং সুরের প্রবেশাধিকার নেই।
সংঘর্ষটা কি এখানেই নয়! বারো মাসে তেরো পার্বণের বাংলায় গান তার সাংস্কৃতিক আধার। হাজার বছর ধরে গ্রামের পথে একতারা বা দোতারা বাজিয়ে গভীর দার্শনিক গান গেয়েছে বাউল ফকিরেরা। আমাদের রাখাল, চাষি, মাঝি, সাপ ধরা বেদে থেকে ছাদ পেটানোর শ্রমিক পর্যন্ত প্রতিটি পেশা তার নিজস্ব মৌলিক গানে সমৃদ্ধ। সেই গানটাই সালাফি মতে নিষিদ্ধ!
কাশ্মীরে মন্দিরের শেষ নেই। কিন্তু সেগুলো এখন পাহারা দিয়ে রাখতে হয়। নাহলে ভেঙ্গে দেওয়া হবে। খোঁজ নিলেই দেখতে পাবেন গত ১০ বছরে কাশ্মীরে পীরের দরগাও রক্ষা পাচ্ছে না। ইয়ে, পাকিস্তান স্পন্সরড জঙ্গিরা সব ওয়াহাবী মতের অনুসারী। বর্তমান বিশ্বে যাকে মুসলমান সন্ত্রাস বলে আমরা চড়া দাগে দেগে দি, তার ৯৯.৯% হচ্ছে এই সালাফি ওয়াহাবী সম্প্রদায়ের সন্ত্রাস।
এই নিঃশব্দ এবং স্বশব্দে পরিবর্তনের হাত থেকে রক্ষার উপায় কি?
(কৃতজ্ঞতা স্বীকার - মিলন দত্ত)
No comments:
Post a Comment