Friday, 5 February 2016

ইন্ডিয়ান ইসলামিক চ্যানেল পিছ টিভি

বাংলাদেশে সম্প্রচারিত ইন্ডিয়ান ইসলামিক চ্যানেল পিছ টিভি বাংলা দেখছিলাম সেদিন। ইসলামিক আইন সম্বন্ধিত একটি প্রশ্নোত্তর মূলত অনুষ্ঠান চলছিল তখন। লেখাপড়া জানা এক মুসলমান যুবক হুজুরের কাছে প্রশ্ন করল, "আমরা জানি, ইসলামে ছবি আঁকা হারাম। কিন্তু পরীক্ষার সময় বিভিন্ন প্রশ্নের সাথে চিত্র আবশ্যক থাকে। সেই অবস্থায় চিত্র অঙ্কন করলে আমি গুনাহগার হব কি না?" হুজুর উত্তরে বললেন, "আল্লাহতালা মুসলমানদের জন্য ছবি আঁকা হারাম করেছেন। কিন্তু পরীক্ষার সময় তুমি যদি ছবি আঁকতে বাধ্য থাকো তবে সেক্ষেত্রে তোমার গুনাহ হবে না। তবে মন থেকে ছবি আঁকা যাবে না। ছবি আঁকবে কিন্তু তা পরম তাচ্ছিল্যের সঙ্গে ঘৃণাভরে। কারণ ইসলামে ছবি আঁকা হারাম।" প্রশ্নকারী মাথা নেড়ে নিজের আসনে বসে পড়ল, যেন সে তার প্রশ্নের যথার্থ উত্তর পেয়ে পরম স্বস্তি লাভ করেছে। . সম্প্রতি অনলাইনে বিশেষত ফেসবুকে একটি মহল প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে যে, বাংলাদেশে মাধ্যমিক শ্রেণীর বাংলা ১ম পত্র বইয়ে যেসব গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, কবিতা পড়ানো হচ্ছে তা পড়লে মুসলমান শিক্ষার্থীরা আর মুসলমান থাকবে না, হিন্দু নয়তো নাস্তিক হয়ে যাবে! বাংলাদেশে কেউ হিন্দু বা নাস্তিকদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক প্রোপাগান্ডা চালালেই তাকে জামাতি বলে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু অনলাইনে যারা এই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এরা কেউই জামাত শিবিরের কর্মী সমর্থক নয় বরং আওয়ামী ওলামালীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের কর্মী সমর্থক। গতবছর এই ওলামালীগ প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে এক মানববন্ধন থেকে দাবি করে, পাঠ্যপুস্তক থেকে হিন্দু কবি-সাহিত্যিক দের রচনা বাতিল করতে হবে। সেই সূত্র ধরেই অনলাইনে এমন প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। . বাংলা সাহিত্যের প্রতি বাঙালী মুসলমানদের বিদ্বেষ নতুন নয়। ব্রিটিশ আমলে বাঙালী হিন্দু সাহিত্যিকেরা মুসলমানদের যত আপন করতে চেয়েছে মুসলমানরা তত দূরে সরে গেছে। হিন্দু সাহিত্যিক দের কখনো হিন্দু সাহিত্য সমিতি গঠনের প্রয়োজন পড়েনি সেকালে কিন্তু মুসলমানদের প্রয়োজন হয়েছে মুসলিম সাহিত্য সমিতি গঠন করবার। হিন্দু কবি বা হিন্দু সাহিত্যিক অথবা হিন্দু রেনেসাঁর যুগ বলে কিছু শোনা যায় না কিন্তু মুসলিম কবি সাহিত্যিক বা মুসলিম রেনেসাঁর যুগের কথা আমরা জানতে পারি। বাংলা সাহিত্যে কারা সাম্প্রদায়িক বিভাজনের সৃষ্টি করেছে তবে বিচার করুন। আজকাল মুসলমানরা রবীন্দ্র-শরৎ যুগে তাদের রচনায় মুসলিম চরিত্রের অভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তার উত্তর স্বয়ং শরৎচন্দ্র দিয়েছিলেন মুসলিমদের উদ্দেশ্যে রাখা তাঁর এক বক্তৃতায়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, মুসলমানরা তাদের ধর্মের ব্যাপারে বড্ড সংবেদনশীল। তাই চরিত্রের বিচারে মুসলমানকে কোনো খল চরিত্র রূপে রূপদান করলে গোল বাঁধতে পারে। . ইংরেজি শিক্ষার মত বাংলা শিখতেও সেসময়ের আরবি ফার্সি জানা মুসলমানরা অনিহা দেখাতো। কারণ ইংরেজির মত বাংলাকেও ওরা বিদেশী হিন্দুয়ানী বলতে মানতো। বাংলা ও বাঙালীর কৃষ্টি সংস্কৃতিকে আজও এরা হিন্দুয়ানী বলে মানে। ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলা ও ইংরেজির চর্চা না করে কেবল আরবি উর্দু ফারসির চর্চা করে মুসলমান সমাজ পিছিয়ে পড়ে তার দায় চাপায় হিন্দুদের ঘাড়ে। বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের তেমন কোনো অবদান নেই। হিন্দু মুক্ত বাংলা সাহিত্য মানে অসম্ভব চিন্তা। মধ্যযুগের মুসলমান সাহিত্যিক দের রচিত উর্দু মিশ্রিত কথিত বাংলা সাহিত্য বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারে মূল্যহীন জঞ্জাল ছাড়া কিছুই নয়। আজও বাংলাদেশে বাংলাদেশী লেখকদের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের রচনার চাহিদা বেশি থাকে। কেন? কারণ পশ্চিমবঙ্গের লেখকেরা পারেন আরবি উর্দুর দোষমুক্ত প্রাঞ্জল বাংলা উপহার দিতে। . বাংলা পাঠ্যবইয়ে যদি নবির উদারতার মিথ্যা গালগল্প পড়নো যায়, মসজিদের ইতিকথা পড়ানো যায় তবে হিন্দু লেখকদের রচনা পড়লে অসুবিধা কোথায়? কাফের বিজ্ঞানীদের থেকে বিজ্ঞান শেখা গেলে মালাউন হিন্দুদের থেকে বাংলা সাহিত্য শিখলেও বিশেষ দোষ হবে না। আরব্য রজনী শেখানোর দরকার হলে মাদ্রাসা শিক্ষায় তা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। কেউ মানা করবে না।

No comments:

Post a Comment