একটা প্রশ্ন বহুদিন থেকে তোলা হচ্ছে
ইসলাম যদি এইসব তালেবান-আইএস তৈরি
করে থাকে তাহলে মাত্র ৩০ বছর ধরে কেন
এগুলোর সৃষ্টি হচ্ছে, ১৪০০ বছর কেন সৃষ্টি
হয়নি? এই প্রশ্নটি আসলে তৈরি করে
দিয়েছেন বামপন্থিরা, যারা আফগান যুদ্ধে
আমেরিকার তালেবানদের সাহায্য করাকে
পৃথিবী জুড়ে ইসলামী জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া
দিয়ে উঠার জন্য দায়ী করেন। আসলে এ
ধরণের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে হয় অজ্ঞতা
থেকে নয়ত বিশেষ কোন মতলব থেকে। কারণ
তালেবান-আইএস-বেকো হারাম বিগত ৩০ বছর
ধরে জন্ম নিচ্ছে এটি একটি ‘পরিস্থিতি’
মাত্র। ইসলামের প্রফেট মদিনা থেকে
বিভিন্ন রাজ্যে দূত মারফত চিঠি পাঠাতেন
তার আনুগত্যতা স্বীকারের জন্য। তিনি সৈন্য
বাহিনী প্রেরণ করতেন বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ
করতে। মধ্যযুগে দেশ দখল বা পদাণত বলতে যা
বুঝায় এটি ছিল তাই। কোন নতুনত্ব ছিল না
সেযুগে এটি। কিন্তু যেটি নতুন ও অভাবনিত
ছিল, পৃথিবীর ইতিহাসে ইসলাম ধর্ম স্রেফ
ধর্ম থাকেনি, সেটি হয়ে উঠে সাম্রাজ্যবাদী
একটি শক্তি। ইতিহাস তো আর মুছে যায়নি।
প্রফেটের যুগ থেকে শুরু করে তার
অনুসারীদের পরবর্তীকালে শাসননামলকে
অনুসরণ করে দেখুন। সবচেয়ে বড় কথা প্রফেট
মক্কা-মদিনার প্রিন্স হয়েছিলেন। তার মৃত্যু
পরবর্তী তার অনুসারীরা সেই পদটি দখল
করতে নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ি
হানাহানিতে লিপ্ত হয়। তারপর এই ইসলামী
শক্তি ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল,
অর্থ্যাৎ মুসলমানরা ইউরোপ পর্যন্ত দখল
করেছিল। তাদের ইসলামী শাসন বহুদিন
পর্যন্ত সেখানে বলবৎ ছিল। পৃথিবীতে
ইসলামী মতবাদে বিশ্বাসী আরবদের ছিল সে
যুগ। বহুদিন পর্যন্ত তারা শাসন করেছিল।
তারপর পালাবদল ঘটে। ইসলামী সাম্রাজ্যের
পতন ঘটে। নতুন যুগের নতুন পরাশক্তির কাছে
শোচনীয় পরাজয় ঘটে ইসলামের। ইসলাম
বহুদিন পর্যন্ত আহত বাঘের মত নিজের থাবা
চেটে কাটিয়ে দিতে বাধ্য হয়। যদি
ভারতবর্ষের কথাই ধরি, ইউরোপীয় সভ্যতার
সর্বচ্চ শিখর যখন তুঙ্গে তখন মধ্যযুগীয়
বিশ্বাস ও সমরবিদ্যার ইসলামী শাসকদের
শোচনীয় পরাজয় ঘটে তাদের হাতে।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম জ্ঞান চর্চা থেকে
বঞ্চিত হয়ে ইসলামী শক্তি হয়ে উঠে
অপদার্থ। সেখান থেকে উঠে দাড়ানো
কঠিন। মুসলিমরা মূলত জ্ঞান চর্চার সঙ্গে
পরিচিত হয় বাগদাদের খলিফাদের হাত ধরে।
মুতাজিলা মতবাদ অনুসরণ করার কারণে মূল
ইসলামী কুরআন-সু্ন্নাহ’র বাইরে যে বিশাল
জ্ঞান ভান্ডার তার পৃষ্টপোষকতা ছিলেন
তারা। কিন্তু ইমাম গাজ্জালীদের কাছে
মুতাজিলা মতবাদীদের শোচনীয় ও নিমর্ম
পরাজয় মুসলমানদের কুরআন-হাদিস কেন্দ্রিক
জ্ঞানে ফের নিয়ে যায়। প্রকৃতির নিয়ম
হচ্ছে যে যোগ্য সেই টিকবে, অযৌগ্য
হারিয়ে যাবে। যোগ্যরাই পৃথিবী শাসন
করবে। মুসলমানরা যে যুগে তাদের সাম্রাজ্য
বিস্তৃত করেছিলেন সে যুগে তারাই ছিল
শ্রেষ্ঠ সরমবিদ, তাই তাদের কাছেই পৃথিবী
পদনত হয়েছিল। কিন্তু আধুনিক যুগ ছিল উন্নত
চিন্তাশক্তির। ইউরোপের ছোট্ট কয়েকটি
দেশ, সামান্য জনসংখ্যার এইসব ইউরোপীয়
জাতি পরবর্তীকালে গোটা পৃথিবীবাসীকে
শাসন করে গেছে! ইউরোপের জ্ঞান-
বিজ্ঞানের এই উৎকর্ষতার যুগে ইসলামী
শক্তির পুরোনো দিনের জাবর কাটা ছাড়া
কয়েক শতাব্দি আর কোন কাজ ছিল না।
কিন্তু ইংরেজ শাসনের মাঝামাঝি আমরা
জিহাদী ইসলামের ঝলকানি খানিকটা
দেখতে পাই শরীয়তুল্লাহ ও তিতুমীরের
ইংরেজ বিরোধী লড়াইয়ে। হজ ফের এই দুই
মুসলিম ওহাবী মতবাদের দীক্ষা লাভ করে
ভারতবর্ষে ফিরে স্থানীয় মুসলিমদের
সংঘবদ্ধ করতে থাকেন সাম্রাজ্যবাদী
ইংরেজদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তারা ভারতবর্ষে
ফের মুসলমানদের শাসন কায়েম করতে
বদ্ধপরিকর ছিলেন। মুসলমনাদের মধ্যে
সাম্প্রদায়িক বিভক্তি, স্থানীয় হিন্দুদের
সঙ্গে নিজেদের পৃথক জাতিসত্ত্বার ধারণা
তখন থেকেই দানা বাধতে তারা সহায়তা
করেন। কিন্তু পরাক্রমশীল ইংরেজরদের
কাছে এইসব আবেগী বাঁশের কেল্লা
কামানের গোলার বাস্তবতায় উড়ে যায়।
তিতুমীর যে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াই
করেছিলেন সেটা তালেবানদের
আফগানিস্থানে সোভিয়েত শক্তির বিরুদ্ধে
লড়াইয়ের অনুরূপ। তালেবানের বিজয় কি
ঘটেছিল সেই জ্বলজ্বলে ইতিহাস আমাদের
বুঝতে সক্ষম করে তিতুমীরদের বিজয়
ভারতবর্ষকে কি উপহার দিতো। গান্ধি
কিংবা নেতাজি নিশ্চয় সেভাবে
ভারতবর্ষকে চাইতেন না।
তিতুমীরদের পরাজয়ের পরও তাদের মতবাদ
ভারতবর্ষের মুসলিম নেতাদের মনের গভীর
লালিত হতে থাকে যার বর্হিপ্রকাশ আমরা
দেখতে পাই খিলাফত আন্দোলনকালে।
তুরষ্কের ইসলামী খেলাফতের দাবীতে
ভারতবর্ষের মুসলমানদের আন্দোলন
তাদেরকে শুধু শিকড়হীনই প্রমাণ করেনি,
গোটা ভারতবর্ষে সন্দিহান করে তুলে
তাদের সম্পর্কে। কিন্তু সেটা অন্য প্রসঙ্গ।
মুসলিমদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় যে শক্তি
প্রয়োজন ইসলামী শক্তি দেখাতে সেটি
অবিভক্ত ভারতবর্ষে সম্ভব নয়। মুসলমানদের
জন্য পৃথক রাষ্ট্র বা শাসন ভিন্ন সেটি সম্ভব
নয়। এই কৌশল ভিন্ন ইসলামী শক্তির তখন
কোন বল নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তি
কিংবা হিটলার-মুসলিনি যাদেরই জয় হোক
সেটা ইসলামী শক্তির কিছু যায় আসে না।
ক্ষমতা ইউরোপীয়নাদের হাতেই থাকবে।
সেটাই হয়েছে। এদিকে আরব ভূখন্ডে সৌদি
আরব ও ভারতবর্ষে পাকিস্তান নামের
মুসলমানদের রাষ্ট্র ব্যতিত ইসলামী শক্তির
কোমড় উচু করে দাড়ানোর কিছু নেই। ততদিনে
সৌদি আরব পুরো বিশ্বে মুসলমানদের
একমাত্র মুরব্বি। ইসলামের ধ্বজা উচিয়ে
রাখার একমাত্র উত্তরসূরী। সৌদি আরব একটি
ইসলামী শরীয়া শাসিত মধ্যযুগীয়
ধ্যানধারণার দেশ হলেও আধুনিক রাষ্ট্র
ব্যবস্থার একটি রাষ্ট্র। তাকে আধুনিক যুগের
বৈশ্বিক রাষ্ট্রনীতি মান্য করতে হয়। যেমন
জাতিসংঘে যোগদান। অমুসলিম দেশের সঙ্গে
ব্যবসা-বাণিজ্য,কূটনৈতিক সম্পর্ক ইত্যাদি
তাকে করতে হয়। আজকের যুগে খিলাফত
বিস্তৃত করে জিহাদের ডাক দেয়া সম্ভব নয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের রাজনৈতিক
রূপ বদলে গেছে। সব রাষ্ট্র মিলে জাতিসংঘ
বানিয়েছে। জেনেভা কনভেশনে সই করেছে
যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে সেখানে যে ধারাগু্লো
আছে তাতে ইসলামের গণিমতের মালের যে
ধারণা তা সুষ্পষ্টভাবে মানবতা বিরোধী
কাজ বলে গণ্য। সৌদিসহ আরবদের সেই
চুক্তিতে সই করতে হয়েছে বিশ্ববাসীর
সঙ্গে। এ হচ্ছে যুগের দাবী। আজকের যুগে
১৪০০ বছর আগের প্রফেটের মত করে খিলাফত
চালানো সম্ভব নয়। তাই জিহাদের রাস্তা
ভিন্ন হয়ে গেছে। সৌদি আরব সেই ভিন্ন
পথটাই ধরল।দরিদ্র মুসলিম দেশগুলোকে সে
তার মতবাদীদের বিশাল এক অনুসারীতে
পরিপূর্ণ করার মিশনে নেমে পড়ল। হাতে
তেল বেচার কাঁচা পয়সা। বিভক্ত ভারতবর্ষে
সৌদি পেট্রডলারে নানা ছদ্ম পরিচয়ে শুরু
হলো ওহাবী ইসলামের চর্চা। বাংলাদেশ
স্বাধীন হবার ৪৪ বছরে সেটা চলেছে দ্রুত
গতিতে, বাংলাদেশের সরকারগুলো প্রত্যক্ষ
মদতে। সৌদি আরব শুধু এখানে নয়,
আফ্রিকাতে তাদের ডলার ঢেলেছে। কিন্তু
সৌদির জিহাদী মিশন এনজিও, মসজিদ,
মাদ্রাসা নামে কাজ করার সেসব আমাদের
চোখে পড়ে না। চোখে তখনই পড়ল যখন
তালেবান বা আল কায়দার মত শক্তির জন্ম
হলো। সৌদি আরবের একছত্র যে ইসলামী
ঝান্ডাবাহীর গৌরব ছিল সেখানে তালেবান
ও আল কায়দা ভাগ বসালো। সৌদি টাকায়
বাড়বাড়ন্ত হওয়া বাংলাদেশী ও
পাকিস্তানী মাদ্রাসার মুজাহিদরা যোগ
দিল তালেবানের হয়ে যুদ্ধ করতে। সৌদি
আরব খুশিই ছিল। কিন্তু আইএস জন্ম নিয়েছিল
তালেবান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া ভিন্ন
মতালম্বিরা যারা তালেবানী নীতিকে
ইসলাম খেলাফ বলে সরে এসেছিল। এরা
এতটাই গোড়া ইসলামপন্থি যে সৌদিদের
রাজতন্ত্রেরও বিরোধী। এটি ইসলামের শেষ
উত্তোরাধীকারের জন্য শংকার কথা। তাই
অস্তিত্ব বাঁচাতে তাকেও আইএসে বিরোধী
যুদ্ধে নামতে হয়। সৌদিদের বড় প্রচারণা
ছিল আইএস ইসলামী শক্তি নয়, এরা ইসলামের
শত্রু ইহুদীদের তৈরি। এটি তাদের যুদ্ধ জয় ও
মুসলমানদের পাশে পাবার একটা প্রচারণা।
নিজেদের অস্বস্তি বাঁচাতে এরকম প্রচারণা
তার প্রয়োজন ছিল। এই হচ্ছে বর্তমান চিত্র,
এই যুদ্ধের ফল কি হবে সেটা ভবিষ্যতেই
আমরা দেখতে পাবো। আমাদের আলোচনা
ছিল ইসলাম যদি এইসব তালেবান-আইএস
তৈরি করে থাকে তাহলে মাত্র ৩০ বছর ধরে
কেন এগুলোর সৃষ্টি হচ্ছে, আমরা সেই
আলোচনা করেছি বলে বিশ্বাস, আইএস-
তালেবান ঠিকই মাত্র ৩০ বছর ধরে জন্ম
নিচ্ছে, সেটি ভিন্ন পরিস্থিতি ভিন্ন পন্থা
মাত্র, কিন্তু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মধ্যযুগীয়…। সুসুপ্ত পাটক
তার মতবাদীদের বিশাল এক অনুসারীতে
পরিপূর্ণ করার মিশনে নেমে পড়ল। হাতে
তেল বেচার কাঁচা পয়সা। বিভক্ত ভারতবর্ষে
সৌদি পেট্রডলারে নানা ছদ্ম পরিচয়ে শুরু
হলো ওহাবী ইসলামের চর্চা। বাংলাদেশ
স্বাধীন হবার ৪৪ বছরে সেটা চলেছে দ্রুত
গতিতে, বাংলাদেশের সরকারগুলো প্রত্যক্ষ
মদতে। সৌদি আরব শুধু এখানে নয়,
আফ্রিকাতে তাদের ডলার ঢেলেছে। কিন্তু
সৌদির জিহাদী মিশন এনজিও, মসজিদ,
মাদ্রাসা নামে কাজ করার সেসব আমাদের
চোখে পড়ে না। চোখে তখনই পড়ল যখন
তালেবান বা আল কায়দার মত শক্তির জন্ম
হলো। সৌদি আরবের একছত্র যে ইসলামী
ঝান্ডাবাহীর গৌরব ছিল সেখানে তালেবান
ও আল কায়দা ভাগ বসালো। সৌদি টাকায়
বাড়বাড়ন্ত হওয়া বাংলাদেশী ও
পাকিস্তানী মাদ্রাসার মুজাহিদরা যোগ
দিল তালেবানের হয়ে যুদ্ধ করতে। সৌদি
আরব খুশিই ছিল। কিন্তু আইএস জন্ম নিয়েছিল
তালেবান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া ভিন্ন
মতালম্বিরা যারা তালেবানী নীতিকে
ইসলাম খেলাফ বলে সরে এসেছিল। এরা
এতটাই গোড়া ইসলামপন্থি যে সৌদিদের
রাজতন্ত্রেরও বিরোধী। এটি ইসলামের শেষ
উত্তোরাধীকারের জন্য শংকার কথা। তাই
অস্তিত্ব বাঁচাতে তাকেও আইএসে বিরোধী
যুদ্ধে নামতে হয়। সৌদিদের বড় প্রচারণা
ছিল আইএস ইসলামী শক্তি নয়, এরা ইসলামের
শত্রু ইহুদীদের তৈরি। এটি তাদের যুদ্ধ জয় ও
মুসলমানদের পাশে পাবার একটা প্রচারণা।
নিজেদের অস্বস্তি বাঁচাতে এরকম প্রচারণা
তার প্রয়োজন ছিল। এই হচ্ছে বর্তমান চিত্র,
এই যুদ্ধের ফল কি হবে সেটা ভবিষ্যতেই
আমরা দেখতে পাবো। আমাদের আলোচনা
ছিল ইসলাম যদি এইসব তালেবান-আইএস
তৈরি করে থাকে তাহলে মাত্র ৩০ বছর ধরে
কেন এগুলোর সৃষ্টি হচ্ছে, আমরা সেই
আলোচনা করেছি বলে বিশ্বাস, আইএস-
তালেবান ঠিকই মাত্র ৩০ বছর ধরে জন্ম
নিচ্ছে, সেটি ভিন্ন পরিস্থিতি ভিন্ন পন্থা
মাত্র, কিন্তু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মধ্যযুগীয়…। সুসুপ্ত পাটক
This comment has been removed by the author.
ReplyDelete