আজ পবিত্র 'গুরু পূর্ণিমা' .....
এই উপলক্ষে আজকের দিনে আমার ক্ষুদ্র চিন্তায় একটি ছোট্ট উপস্থাপনাঃ - " ভারতীয় গুরুবাদ ও হিন্দুত্বের ধ্বংস"
ভারতবর্ষে শ্রী চৈতন্য দেবের আবির্ভাবের পূর্ববর্তী সময় এবং পরবর্তী সময়ের মধ্যে হিন্দুধর্মে এক ব্যাপক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। চৈতন্য পূর্ববর্তী সময়ে গুরুবাদ প্রায় তেমন একটা ছিল না বললেই চলে। সুতরাং সে সময় হিন্দু ধর্মের প্রবাহের গতি ছিল নদীর মধ্য গতির মত। বিরাট অজগর সাপের মত নিজস্ব ও স্বকীয় ছিল তার চলন। তাতে গতিপথ কখনও কখনও পরিবর্তিত হয়েছে ঠিকই ... কিন্তু জটিল পঙ্কিল আবর্তে তা কখনোই আবর্তিত হয়ে রুদ্ধ হয় নি। ঠিক হোক, ভুল হোক, .. নিজের ক্ষমতায় সাবলীল ছন্দে তার অবাধ পদচারনায় আসমুদ্র হিমাচলের হিন্দুরা একই হিন্দুত্বের মালায় গ্রন্থিত ছিল। ফলে একটা সুবিধা এই ছিল যে, যখন যেখানে হিন্দুত্বের উপর আক্রমণ নেমে এসেছে, মালার সুতোয় টান পড়েছে। রে রে করে প্রতিরোধে নেমে পড়েছে সবাই। বেঁচেছে একসঙ্গে ... মরেছেও একসঙ্গে। হাঁসি আনন্দ দুঃখ বিরহ ভাগ করে নিয়েছে পরস্পরের সঙ্গে। তৈরি হয়েছে এক অপূর্ব সহিষ্ণুতা সহ মানসিক প্রচন্ড দৃঢ়তা। তীব্র এক প্রতিক্রিয়াশীল সংবেদনমূলক হিন্দুত্ব টিকিয়ে দিয়েছিল সনাতনপন্থীদের প্রাণ ভোমরা...। যার অবশ্যম্ভাবী ফল ছিল, – ধর্ম রক্ষার্থে আপোষ হীন লড়াই। যা পরবর্তী কালে চৈতন্য প্রবর্তিত ভক্তিবাদ প্রভাবিত অঞ্চলে প্রায় নিঃশেষ হয়ে পড়ে। ফলত সেই সব অঞ্চলে বিশেষ করে বাংলার নরম মাটিতে ইসলাম আগুনের চেয়েও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যদি একবার এই ভারতের চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে আনেন, তাহলে সহজেই বোঝা যায় যে কেন একমাত্র ভারতেই আজও সনাতন পন্থীরা বেঁচে আছে।
কিন্তু এরপরেই ... অর্থাৎ চৈতন্যপরবর্তী যুগে গুরুবাদের জন্ম হল। ব্যাস.. আর যায় কোথা? হাজারটা গুরু .. তাদের লাখোটা মত... আর কয়েক কোটি শিষ্য! – সর্বনাশ না হয়ে পারে? ফলত হিন্দু সমাজে তৈরি হল দল ... উপদল, যা নিয়ে শুরু হল দলাদলি আর পরিশেষে অবশ্যই লাগল কোন্দল...।। হিন্দু সমাজ ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল। আজ তাই নামেই তারা ভারতে সংখ্যাগুরু, অথচ বাস্তবে তাকিয়ে দেখুন তাদের মত ছন্নছাড়া দশা আর পৃথিবীতে কোন জাতটার আছে? কারা এতটা সর্বশক্তিমান হয়েও এমন হীনবল?
হ্যাঁ ... এর একমাত্র কারন – আমাদের গুরুবাদ। এই গুরুরাই নাটের গুরু! তারা কখনোই চাননি এক অখন্ড হিন্দু সংহতি তৈরি হোক। তারা সেই পথ বা স্বপ্নেরও কোন দিশা আমাদের দেখিয়ে যেতে পারেন নি। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই চিন্তা করেছেন, নিজেদের স্বার্থের কথা। ... আর আমাদের হতভাগ্য হিন্দু সমাজ, এই গুরুদের স্বার্থ রক্ষার কারনেই নিজেরা নিজেদের আত্মাহুতি দিয়ে এসেছে। - এ ভীষণ যন্ত্রণার, ভীষণ লজ্জার... আর তেমনই দুঃখের!
শাস্ত্রে নাকি বলেছে... “"গুরু ব্রক্ষ্মা গুরু বিষ্ণু গুরু মহেশ্বরম গুরু সাক্ষাদ্ পরমব্রক্ষ তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ ||"
.... মিথ্যে! মিথ্যে!! ... এ চরম মিথ্যে!
গুরুদেব কি ভাবে ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু বা মহেশ্বর হতে পারেন? এক শ্রেণীর অসৎ ও ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ী কালে কালে এসব প্রচার করে গেছেন। ... জানি, এ কথা বলাতেই অনেকে আমার উপর চটবেন। কিন্তু আজ আর এই বিষয়ে না বলা ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই। স্বয়ং ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দেব নিজ মুখে যেখানে বলেছেন, “গুরু হল ঘটক, ... ঈশ্বরের সঙ্গে ভক্তের আলাপ করিয়ে দেন” সেখানে আমার আর নিশ্চয়ই এ বিষয়ে নতুন কোন ব্যাখ্যা দেবার প্রয়োজন নেই।
বিষয়টিকে আমি আরেকটু ভিন্ন ভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই ...।
আপনারা সবাই MAP বা মানচিত্র সম্পর্কে অবহিত আছেন। আচ্ছা ... এবার বলুন তো এই মানচিত্র থেকে আমরা কি কি বুঝতে পারি? হ্যাঁ ... এই মানচিত্র আমাদের একটি নির্দিষ্ট কোন এলাকা বা দেশ সম্পর্কে তার রাজনৈতিক, সামাজিক, ভৌগলিক, অর্থনৈতিক ... ইত্যাদির সমন্বয়ে একটি সামগ্রিক চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরে। দেশটি সম্পর্কে আমরা বিশদে অনেক তথ্য জানতে পারি। একটা পরিস্কার ধারনা তৈরি হয়, জায়গাটির সম্পর্কে।
কিন্তু তাই বলে সেই মানচিত্রটি তো আর প্রকৃতপক্ষে দেশ হয়ে যায় না? ... যায় কি? – আপনারাই বলুন।
ঠিক তেমনই ... গুরু কখনও দেবতা হন না। ... দেবতা হতে পারেন না। তাঁর মধ্যে আমরা ঐশ্বরিক ছায়া দেখতে পারি, ... আধ্যাত্মিকতার প্রকাশ দেখতে পারি। ... অনুভব করতে পারি সেই অপার করুনাময়ের স্বরূপ। ... কিন্তু ওইটুকুনই ...। তার বেশি নয়।
যেমন ধরুন ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের কথাই ধরা যাক। খুব জোর দিয়ে বলতে পারি, ক্ষাত্রতেজের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করলে, ওনার নামের মধ্যে কিন্তু পুরুষোত্তম শ্রী রাম বা যুগপুরুষ শ্রীকৃষ্ণের কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাবে না, শুধু কি তাই? ... যে আদ্যাশক্তি কালী (শক্তি’র) সাধনা করে তিনি শ্রী রামকৃষ্ণ হয়েছেন, সেই কথাই আমরা আজ আর অনেকেই মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করি না। ‘মা’ আজ তাই রক্ত চাইলেও আমরা গর্ধবের দল, তার সামনে মাটিতে মাথা কুটছি,... চোখের জলে বুক ভাসাচ্ছি!! .... লজ্জা! লজ্জা!!
তাই বন্ধুরা , যে গুরু আমাদের ইহজন্মের নিশ্চিত সৌভাগ্য লাভ করা থেকে বঞ্চিত করে, আত্মরক্ষার বিষয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে ... এক অনিশ্চিত পরজন্মের আত্মতত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন, যাদের চোখে সাধারন হিন্দুর দুঃখ যন্ত্রণা, মহিলাদের সম্ভ্রমহানী কেবলই কর্মফলের নিস্ফল সান্ত্বনা মাত্র, ... তাদের থেকে সাবধান! এরা পরগাছা। - এরা এই সমাজের বোঝা।
তার সঙ্গে এও স্মরণে রাখা প্রয়োজন, এই সর্বধর্মসমন্বয়কারী ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ী সাধুর দল আমাদের নিজেদের মধ্যে এক নিরবিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্নতা-বিভেদের সৃষ্টি করে... দিনে দিনে কিন্তু ইসলামিক শক্তি সহ অন্যান্য বহিঃশত্রুর হাতে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন।
আসুন ... সবাই আজ তাই নিজেদের 'হিন্দু' ভাবতে শিখি। বৈষ্ণব নয়, শৈব নয়, শাক্ত নয়, বেদান্তবাদী নয়, ... অদ্বৈত বাদীও নয়।... ব্রাহ্মণ নয়, কায়স্থ নয়, বৈশ্য নয় কিংবা শূদ্রও নয়, বাবু নয় – চাঁড়ালও নয় ... আমরা হিন্দু ... শুধুই হিন্দু। বিশ্বাস করতে শিখি যে, আমরা একই হিন্দু পরিবারভুক্ত। আমাদের একটাই গুরু ... ‘হিন্দুত্ব’। আর আমাদের আরাধ্য দেবতা ... তিনি আর কেউ নয় - ‘ভারত মাতা’ স্বয়ং।।
পাশাপাশি আরও একটি প্রশ্ন।
এই সব হিন্দু’র ধর্মশত্রু বিভীষণদের আর কত দিন আমরা সযত্নে পুষে রাখব? .... এখনও কি এই অকর্মণ্যদের কান ধরে রাস্তায় টান মেরে বের করে দেবার সময় আসেনি ??
ReplyDeleteগুরু পূর্ণিমার পুন্য লগ্নে - এই হোক আমাদের একমাত্র শপথ .....।।
কৃতজ্ঞতাঃ অনিন্দ্য নন্দী....