ॐॐॐআরব সাগরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মূল দ্বারকা নগরীর সন্ধান লাভॐॐॐ
দ্বাপর যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকার রাজা ছিলেন।বর্তমান ভারতের গুজরাট প্রদেশে জামনগর জেলার গোমতি নদীর
তীরে দ্বারকা নগরী অবস্থিত এবং এখানে প্রায় ৮০০শত বছরের অধিক সময় পূর্বে নির্মিত ৫৭ মিটার উঁচু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মন্দির রয়েছে।এটাই সমস্থ সন্ন্যাসী ও পন্ডিতদের কাছে ভগবান
শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা বলে স্বীকৃত(আর্য ও আর্য ১৯৯৪)।অন্যদিকে মহাভারতে বলা হয়েছে যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কিংবদন্তীর দ্বারকা সাগরে নিমজ্জিত হয়েছিল।এই গ্রন্থের পরিশিষ্ট হরিবংশে বলা হয়েছে যে,এই সমৃদ্ধ নগরী ভারতের পশ্চিম উপকূলে যেখানে গোমতী এসে সাগরে মিলেছে সেখানে অবস্থিত।
বাংলাদেশের ঢাকা থেকে প্রকাশিত ভারত বিচিত্রার পঞ্চদশ বর্ষ মার্চ ১৯৯৮ ফাল্গুন চৈত্র ১৩৯৪,পৃষ্টা ২৪-২৮ তে গোয়াস্থ ন্যাশানাল ইন্সটিটিউট অব অসেনোগ্রাফি এর মেরিন আরকিওলজি সেন্টারের প্রজেক্ট ডাইরেক্ট্রর ডঃ এস আর রাও এর লিখিত ও শ্রী নান্টু রায়ের অনুবাদকৃত "সমুদ্র প্রত্নতত্ত্বের বিস্ময় জলধি নিমগ্ন মন্দিরময় শহর দ্বারকাকে খুঁজে পাওয়া গেছে" র্শীষক এক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।এ প্রবন্ধে উক্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বহু চেষ্টা করে জলমগ্ন ও ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধারের মাধ্যমে পুরানো সময়ের সমুদ্র তীরবর্তী জাহাজ নির্মাণ ও তাত্কালীন শিল্প সংস্কৃতির ওপর ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে দ্বারকা নগরীর সন্ধান লাভের এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উপস্থাপন করতে সমর্থ হয়েছে।এই ডুবন্ত জাহাজ ও জলমগ্ন শহর সমুদ্রতলে টাইম স্কেল (Time Scale) হিসেবে কাজ করেছে।প্রায় ২১০টি জাহাজের ভগ্নাবশেষ এ পর্যন্ত পাওয়া
গেছে এবং এর মধ্যে ৩২টি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে।লাক্ষাদ্বীপের কাছে নিমজ্জিত রত্নবাহী একটি জাহাজের
উপর ওপর প্রাথমিকপরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয়েছে।
ভূপদার্থিক জরিপ (Geological Survey) করে দেখা গেছে যে,দ্বীপেও জাহাজের ভগ্নাবশেষ রয়েছে।প্রত্নতাত্ত্বিক আবিস্কারের মধ্যে ডুবে যাওয়া প্রাচীন বন্দর আবিস্কার হচ্ছে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা।ভারতীয় সমুদ্র উপকূলে অনেক প্রাচীন বন্দর ডুবে গেছে,আর এর মধ্যে দ্বারকা হচ্ছে একটি।দূর নিয়ন্ত্রিত (Remote Controlled) সাইডস্কান সোনার (Sonar) ও সাব এটম প্রোফাইলারের সাহায্যে সমুদ্র পৃষ্ঠের প্রায় ৪০০০মিটার নিচে টাইটানিকের অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব হলেও অগভীর জলে খোঁজাখুজি করে দ্বারকা নগরীর সমুদয় লুপ্ত নিদর্শন উদ্ধার করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়েছে।কেননা ৫-৮
মিটার নীচে সমুদ্র বক্ষে অজমাটবদ্ধ ও চলনশীল বালুকনারাশি ভূ-পদার্থিক জরীপ কাজে বেশ অন্তয়ায় সৃষ্টি করে।এছাড়া সমুদ্রে অবিরাম ঢেউ ও তীব্র স্রোত।লক্ষ্যবস্তুর ছবি তোলা ও খনন কাজ করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।তবুও ডুবরীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও বিভিন্ন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বালুকারাশি সরিয়ে অবশেষে বিশেষ এক ধরনের ফিল্মে ঐসব নকশা ও কাঠামোর ছবি তুলে আনা হয়।বেট দ্বারকার (Bet Dwarka) আশেপাশে এখনো ভয়ঙ্কর সব
অক্টোপাসের বাস করছে যা ডুবরীদের জন্য বেশ বিপজ্জনক।এসব অসুবিধে ও বাধা অতিক্রম করে সমুদ্র প্রত্নতত্ত্ব
অভিযানের বিজ্ঞানী ও ডুবরীরা দুর্গপ্রাচীর ও অন্যান্য ভবন
পাথরের তৈরি বিভিন্ন স্থাপত্য নিদর্শন,লোহার নোঙ্গর,বিভিন্ন
মুদ্রা,পট,পুঁতির মালা আবিস্কার করতে পেরেছেন।ডুবন্ত দ্বারকা ও বেট দ্বারকায় ১৯৮২থেকে ১৯৮৬ এই চার বছরে সর্বমোট ৫
ধরনের অভিযান চালানো হয়েছে।
আরব সাগরে থেকে সমুদ্র নারায়ণের যে মন্দির দেখা যায়
সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডমার্ক।কারন এখানেই প্রাচীনকালে সমুদ্র দেবতা (Sea God) মন্দির নির্মিত হয়েছিল।৫৭৪ খ্রীস্টাব্দে রাজা গরুলকের (Garulaka King) নানা উত্কর্ণ
লিপি থেকে পূর্বোল্লেখিত দ্বারকার কথা জানা যায়।যদিও পুরানো দ্বারকার ওপরেই নতুন দ্বারকা অবস্থিত তবুও এর প্রকৃত পরিচয় ১৯৭৯-৮০ সালের আগে জানতে পারা যায়নি।এ সময়
দ্বারকাধীশ মন্দিরের সন্মুখে ভূমি খুঁড়ে খ্রিষ্টপূর্ব ১৪-১৫ শতকের
৩টি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষে ডুবন্ত নগরীটির বাস্তুধ্বংস আবিষ্কার করা হয়।এর মাধ্যে খ্রীষ্টপূর্ব নবম শতকে নির্মিত
বিষ্ণু মন্দির সবচেয়ে কম পুরোনো।এখানে বিষ্ণু,শিব ও অন্যান্য দেবদেবীর চমৎকার সব ছবি উৎকীর্ণ রয়েছে।প্রথম দিকের
মৃত্তিকাস্তরে একটি উজ্জ্বল লাল বর্ণের মৃৎ পণ্য পাওয়া গেছে।এটি
প্রভাসক্ষেত্রেরএবং বয়স ১৫শ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ( কার্বন-১৪ প্রণালীতে
বয়স পরিমাণ করা হয়েছে)।প্রভাস হচ্ছে,আরেকটি মহাভারতীয় তীর্থক্ষেত্র যেটি সৌরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় সমুদ্র্র উপকূলে অবস্থিত।দ্বারকার সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে বসতি ছিল এমন প্রমান পাওয়ার পর ডুবন্ত দ্বারকা নগরী খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকখানি বেড়ে গিয়েছিল।দূর উপকূলে (Off shore) অনুসন্ধান চালানোর আগে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওসানোগ্রাফীর বিজ্ঞানীরা ভালভাবে কচ্ছ (Kntch) উপসাগরীয় অঞ্চলের ভূমিরূপ পরীক্ষা করে নিয়েছিলেন।তাঁদের
পরীক্ষা থেকে জানা যায় যে ১০,০০০ বছর আগে এই কচ্ছ উপসাগরীয় অঞ্চল ৬০ মিটার নিচু ছিল।এখানে উঁচু সমতল
ভূমি দিয়ে বিভক্ত কয়েকটি মিনার ও রয়েছে।দ্বারকার সঠিক অবস্থান সর্ম্পকে নিশ্চিত হতে পুরানো পাঠ্য পুস্তকে কিংবদন্তীর দ্বারকার যে বিশদ বর্ণনা দেয়া হয়েছে তাও বিবেচনা করা হয়েছিল।
হরিবংশে (বিষ্ণুপর্ব- ৫৭-৫) দ্বারকাকে জলের ভেতরে দূর্গ
হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং একই পর্বের আরেক জায়গায় (৫৭-১০৩) একে সমুদ্রের ভেতরে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।সবদিক বিবেচনা করে দি মেরিন আর্কিওলোজী সেন্টার ইন দি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওসানোগ্রাফীর বিজ্ঞানীরা দ্বারকার ৩২ কিমি দুরে বেট দ্বারকা নামক দ্বীপে অনুসন্ধান
কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন।বেট দ্বারকাও একটি পবিত্র স্থান।দ্বীপটির পূর্ব উপকূলে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ১৯৮২সালে তারা ৫০০মিটার লম্বা একটি বিরাট দুর্গ প্রাচীর আবিস্কার করেন।এই বেট দ্বারকাতেই পাওয়া গেছে হরপ্পা যুগের পুতির মালা,হাড়ি পাতিল এবং পলা আকৃতির বিরাট দালানের খন্ডাংশ।এগুলো অনেক প্রাচীন বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন।
এছাড়া শামুক ঝিনুক এর তৈরি দেয়াল,সিন্ধু সভ্যতার শঙ্খের সিল মোহর সহ আরো অনেক আরটিফেক্ট এ ভর্তি এই
ReplyDeleteস্থান।জলের ৬.৪১ মিটার নিচে একটি দুর্গ পাওয়া গেছে,যেটা চুনাপাথরের অর্ধ বৃত্তাকার ব্লক দিয়ে তৈরী।এটি সমুদ্র নারায়ন মন্দির থেকে ৬০০ মিটার সমুদ্র গভীরে অবস্থিত।এখানে তিন ছিদ্র বিশিষ্ট ত্রিফলা নোঙর উদ্ধার করা হয়েছে-যা ক্ষয় রোধক দেয়াল হিসেবে ব্যাবহৃত হত সাথে সাথে শত্রুর আক্রমন থেকে ও বাচাত।ডুবে যাওয়ার কারন বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে-১০০০০ বছর আগে সমুদ্রপৃষ্ঠ বর্তমান থেকে ৬০ মিটার নিচু ছিল।অতএব ৩৫০০ বছর আগে সমুদ্র ৯ মিটার নিচু ছিল।দ্বারকা ডুবে যাওয়ার
কারন সমুদ্রপৃষ্ঠ ঊচ্চতা বৃদ্ধি।এভাবে সমুদ্র উপকুল ধবংস হতে খুব একটা দেখা যায়না-শুধু মাত্র কার এস সিটি বাহরাইনের এক বন্দর এই সময় এই ডুবে যায়।দুই স্থানের বয়সকাল প্রায় একই বলে নিরধারন করেছেন বিজ্ঞানীরা।
মহাভারতে রয়েছে যে শ্রীকৃষ্ণের বয়স যখন ১২৫ তখন সামান্য এক কারনে যদু বংশ ধবংস হয়।এরপর বনে শ্রীকৃষ্ণ বসে থাকা
অবস্থায় জরা নামে এক ব্যাধ হরিন মনে করে কৃষ্ণকে বান মারেন।তারপর শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবী ত্যাগ করে গোলক বৃন্দাবন চলে
যান।এই ঘটনার পরই দ্বারকা সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়।যে নগরী শ্রীকৃষ্ণ নিজের হাতে শাসন করেছিলেন সে নগরী শ্রীকৃষ্ণের চলে যাওয়ার পর পরই সমুদ্রের মাঝে বিলীন হয়।এটাই ভগবানের এক মাহাত্ম্য।
কার্টেসি-রথযাত্রা
হরেকৃষ্ণ