উইকিপিডিয়াসহ অন্যান্য ঐতিহাসিক রেফারেন্সগুলো বলছে, মারিয়া আল কিবতিয়া ওরফে মারিয়া কিবতিয়ার সাথে ইসলামের নবী মুহাম্মদের কখনোই বিবাহ হয় নি। মারিয়া কিবতিয়া ছিলেন একজন খ্রিস্টান ক্রিতদাসী, যাকে একবোন সহ উপহার হিসেবে মুহাম্মদকে দিয়েছিলেন তৎকালীন মিশরের খ্রিস্টান শাসক। মুহাম্মদের ঔরসে মারিয়ার ঘরে ইব্রাহিম নামে একটি ছেলে সন্তানেরও জন্ম হয়। যদিও ছেলেটি বাঁচে নি। উল্লেখ্য, তারা বিবাহ ছাড়াই স্বামীস্ত্রীর মতই সংসার করতেন, মারিয়া অন্যান্য স্ত্রীদের সমান না হলেও কাছাকাছি মর্যাদা পেতেন বলেই ঐতিহাসিক সূত্রগুলোতে বর্ণিত। শুধু তাই নয়, দাসী এবং রক্ষিতা মারিয়ার সাথে সম্পর্কের কারণে নবী মুহাম্মদের স্ত্রীদের মধ্যে এমন অবস্থার সূত্রপাত হয় যে, নবী মুহাম্মদ সমস্ত স্ত্রীকে তালাক দেয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছিল।
শুরুতে যখন অসম্ভব রূপবতী এবং কোঁকড়া চুলের মারিয়া দাসী হিসেবে মুহাম্মদের কাছে আসেন, সে সময়ই মুহাম্মদ তার রূপে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এবং তাকে দাসী হিসেবেই তিনি গ্রহণ করেন। মুহাম্মদ এই দাসীর ঘরে নিয়মিত যাতায়াত করতেন এবং রাত্রি যাপন করতেন, যা নবীর স্ত্রী হাফসা জানতে পেরে সহজভাবে গ্রহণ করেন নি। তিনি নবীর এই আচরণের প্রতিবাদ জানান এই বলে যে, নবীর এত স্ত্রী থাকার পরেও কেন নবী দাসীর ঘরে রাত্রি যাপন করেন? হাফসা এটাও হুমকি দেন যে, মুহাম্মদের এই রাত্রি যাপনের কথা তিনি আয়শাকে বলে দেবেন। অতঃপর নবী মুহাম্মদ আয়শাকে কিছু না জানাবার শর্তে তার কাছে প্রতিজ্ঞা করেন, তিনি আর মারিয়ার সাথে সম্পর্ক করবেন না।
পরবর্তীতে একদিন নবী মুহাম্মদ হাফসাকে কৌশলে বাইরে পাঠিয়ে মারিয়ার সাথে সম্পর্ক করেন। হাফসা সেটা বুঝতে পারেন এবং তিনি আয়শাকে সেটা জানিয়ে দেন। সে সময়ে মুহাম্মদের সমস্ত স্ত্রী তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং মুহাম্মদ তার বৈবাহিক জীবনের সব চাইতে জটিল অবস্থার মধ্যে পরে যান। বিশেষ করে মুহাম্মদের প্রিয় এবং বালিকাবধু, প্রবল আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন আয়শার কারণে পরিস্থিতি এতই জটিল আকার ধারণ করে যে, নবী মুহাম্মদ সে সময়ে সকল স্ত্রীকে একসাথে তালাক দেবেন বলেও মনঃস্থির করেন।
অতঃপর আল্লাহ নিজেই নবী মুহাম্মদকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন। তিনি আয়াত নাজিল করে নবীর স্ত্রীদের রীতিমত হুমকি ধামকি দিতে শুরু করেন,
"যদি নবী তোমাদের সকলকে তালাক দেন, তবে সম্ভবতঃ তাঁর পালনকর্তা তাঁকে পরিবর্তে দিবেন তোমাদের চাইতে উত্তম স্ত্রী, যারা হবে আজ্ঞাবহ, ঈমানদার, নামাযী তওবাকারিণী, এবাদতকারিণী, রোযাদার, অকুমারী ও কুমারী।"
[সুরা আত তাহরিম আয়াত ৫]
পরম করুনাময় এবং অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমান আল্লাহপাক নবী মুহাম্মদের স্ত্রী হাফসা এবং আয়শাকে হুমকিও দেন,
"তোমাদের অন্তর অন্যায়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছে বলে যদি তোমরা উভয়ে তওবা কর, তবে ভাল কথা। আর যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য কর, তবে জেনে রেখ আল্লাহ জিবরাঈল এবং সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণ তাঁর সহায়। উপরন্তুত ফেরেশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী।"
[সুরা আত তাহরিম আয়াত ৪]
নবী মুহাম্মদের সাথে মারিয়ার শারীরিক সম্পর্কের কথা সে সময়ে নবী পত্নী হাফসা জানতেন, পরে আয়শা তা জেনে যান। নবী মুহাম্মদ হাফসাকে বলেন, আয়শাকে তুমিই বলেছো। কিন্তু হাফসা সেটা অস্বীকার করে বলেন, তিনি আয়শাকে কিছু বলেন নি। এ সময়ে আল্লাহ নিজেই নাট্যমঞ্চে আবির্ভূত হন নবী মুহাম্মদের পক্ষে,
"যখন নবী তাঁর একজন স্ত্রীর কাছে একটি কথা গোপনে বললেন, অতঃপর স্ত্রী যখন তা বলে দিল এবং আল্লাহ নবীকে তা জানিয়ে দিলেন, তখন নবী সে বিষয়ে স্ত্রীকে কিছু বললেন এবং কিছু বললেন না। নবী যখন তা স্ত্রীকে বললেন, তখন স্ত্রী বললেনঃ কে আপনাকে এ সম্পর্কে অবহিত করল? নবী বললেনঃ যিনি সর্বজ্ঞ, ওয়াকিফহাল, তিনি আমাকে অবহিত করেছেন।"
[সুরা আত তাহরিম আয়াত ৩]
সেই সাথে, আল্লাহ পাক নিজেই নবী মুহাম্মদকে মারিয়ার সাথে যৌন সম্পর্কের জন্য নির্দেশ দেন,
"হে নবী, আল্লাহ আপনার জন্যে যা হালাল করছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্যে তা নিজের জন্যে হারাম করেছেন কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়।"
[সুরা আত তাহরিম আয়াত ১]
অর্থাৎ, আল্লাহ দাসী গমন বৈধ করেছেন, নবী মুহাম্মদ কেন হাফসা কিংবা আয়শাকে খুশি করার জন্য সেই বৈধ কাজটি করছে না, আল্লাহ তা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন, এবং নির্দেশ দিয়েছেন, সেই কাজটি করতে। স্ত্রীদের খুশি করার জন্য দাসী গমন করা থেকে যেন নবী মুহাম্মদ বিরত না থাকেন, সেটা নিয়ে সাবধান করে দেন পরম করুনাময় আল্লাহ পাক।
আশ্চর্য এক চরিত্র পরমকরুণাময় মহান আল্লাহ পাক। সে সময়ে পৃথিবীর এক ভয়াবহ প্রথা ছিল দাস প্রথা। সেই দাস প্রথার কারণে লক্ষ লক্ষ পরিবারের জীবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মহান আল্লাহ পাক তার পুরো কোরানে দাস প্রথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করার মত সময়ই করতে পারেন নি। পারবেন কীভাবে? তিনি সে সময়ে মুহাম্মদেত স্ত্রীদের ঝগড়াঝাঁটিতে মুহাম্মদের পক্ষে ওকালতিতেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন। সেই সাথে মুহাম্মদ যেন ঠিকঠাক ভাবে দাসী মারিয়ার সাথে যৌন সম্পর্ক করতে পারে, এই নিয়ে যেন অন্য স্ত্রীরা তার সাথে ঝগড়া না করে, তা নিয়ে আল্লাহ পাক ছিলেন ব্যতিব্যস্ত। সে বিষয়ে ধমক হুমকি ধামকি দিতে আল্লাহ কার্পণ্য করেন নি। এইসব কাজ করতে গিয়ে ভুলেই গেলেন দাসপ্রথার কথা। বরঞ্চ দাসীদের সাথে মনিবেরা যেন ভালমত যৌন সম্পর্ক করতে পারে, তা নিয়েই ছিল তার সকল মনোযোগ। অদ্ভুত করুনাময় তিনি!
বুঝতে সমস্যা হয় না, আল্লাহ চরিত্রটি আসলে কার মগজে বসবাস করতো। কার যৌন কামনা চরিতার্থ করার জন্য সদা ব্যস্ত থাকতো। কার পক্ষে সদাসর্বদা ব্যতিব্যস্ত থাকতো।
বিঃদ্রঃ এই বিষয়ে বুখারী হাদিসে অনেক কিছুই বর্ণিত আছে। আগ্রহীরা আরো তথ্যের জন্য এই সংক্রান্ত হাদিস এবং তফসীরগুলো পড়তে পারেন। https://en.m.wikipedia.org/wiki/Maria_al-Qibtiyya?_e_pi_=7%2CPAGE_ID10%2C6052602786
No comments:
Post a Comment