প্রশ্নঃ সতীদাহ কি হিন্দু ধর্মের
প্রথা ? (মুসলিমদের কুটক্তির জবাব )
উওরঃ ধর্মীয় বিষয় নিয়ে চুলকানো
মুসলমানদের স্বভাব| এই চুলকাতে গিয়ে
মুসলমানরা নানা প্রশ্ন করে আপনাকে
ক্ষতবিক্ষত করবে, আপনি যদি ঠিকঠাক
জবাব দিতে না পারেন, মুসলমানদের
কাছে আপনি হেয় হবেন এবং এই
সুযোগে বস্তাপচা ইসলামকে তারা
শ্রেষ্ঠধর্ম হিসেবে তুলে ধরবে।
কুশিক্ষিত মুসলমানদের অনেকগুলো
প্রশ্নের মধ্যে একটি প্রশ্ন হলো সতীদাহ
প্রথা সংক্রান্ত। তাই মুসলমানদের
প্রশ্নবান থেকে আপনাদের রক্ষা করার
জন্য, এই পোস্টে দিলাম, সতীদাহ প্রথার
আদ্যোপ্রান্ত; কোথা থেকে,
কিভাবে অনুপ্রবেশ করলো, সে সম্পর্কে।
# পুরো_পোস্টটি_মন
োযোগ_সহকারে_পড়ার_অনুরোধ_রইল
সতীদাহ কি হিন্দু ধর্মের প্রথা ?
নেহেরু মার্কা ইতিহাস, যে
ইতিহাসের মূলকথা হলো, মুসলমানদের
সম্পর্কে কিছু খারাপ লেখা যাবে না,
সেই ইতিহাসের অকল্যানে আমরা
প্রায় সবাই এটাই জানি যে, হ্যাঁ,
সতীদাহ হিন্দু সমাজের প্রথা; এতে
জীবন্তু হিন্দু বিধবাদের পুড়িয়ে মারা
হতো।
কেমন সমাজ, হিন্দু সমাজ ? যে
সমাজে জীবন্ত মানুষদের পুড়িয়ে
মারা হতো ? মুসলমানদের এই প্রশ্নের
মুখে পড়েন নি, এমন শিক্ষিত হিন্দু,
হিন্দুসমাজে খু্ব কমই আছে। সত্যিই তো,
সতীদাহ একটি নৃশংস প্রথা। তাই
মুসলমানদের এই প্রশ্নের জবাবে
হিন্দুদের মাথা নত করে থাকা ছাড়া,
অন্য কোনো উপায় থাকে না।
কিন্তু, সত্যিই কি সতীদাহ হিন্দু
সমাজের প্রথা ? রামায়ণ, মহাভারতে
কি সতীদাহের কোনো উল্লেখ আছে
বা এই ধরণের কোনো ঘটনা আছে ?
জঙ্গলে বাস করলে যেমন, কিছুটা
জংলীত্ব আপনাকে বরণ করতেই হবে,
সভ্য হয়ে আপনি জঙ্গলে বাস করতে
পারবেন না; তেমনি মুসলিম শাসনে ব
মুসলমানদের সাথে বসবাস করতে
গেলেও আপনার জীবনাচরণে কিছু না
কিছু মৌলিক পরিবর্তন বাধ্য হয়ে
আপনাকে আনতেই হবে। সতীদাহ, বাল্য
বিবাহ এবং রাত্রীকালীন বিবাহ এই
ধরণের ঘটনা এবং তা ভারতে মুসলিম
দুঃশাসনের কুফল।
৭১১ খিষ্টাব্দে, মুহম্মদ বিন
কাশিমের কাছে সিন্ধুর হিন্দু রাজা
দাহির পরাজিত হলে, রাজপরিবারের
মেয়েরা সম্মান বাঁচাতে বিষ খেয়ে
আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। এমন সময়
তাদের এক মন্ত্রী, রাণীকে জানায়,
মুসলিম সৈন্যরা খুবই নৃশংস এবং
অমানবিক হয়, এমনকি তারা মৃত
মেয়েদেরকেও ধর্ষণ করতে ছাড়ে না।
এই কথা শুনে মৃত্যুর পর দেহের পবিত্রতা
রক্ষার্থে রাণী আগুনে ঝাঁপ দিয়ে
আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় এবং
অন্তঃপুরের সব মেয়েরা ঐভাবেই
আত্মাহুতি দেয়। এই হলো ভারতবর্ষে
সতী হয়ে মরার জন্য সতীদাহ প্রথার শুরু।
এরপর যখনই কোনো হিন্দু রাজা
মুসলমানদের কাছে পরাজিত হয়ে রাজ্য
হারিয়েছে, তখনই সেখানকার
নারীরা সিন্ধুর রাজপরিবারের
নারীদের দৃষ্টান্তকে অনুসরণ করে
আগুনে ঝাঁপ দিয়ে নিজেদের শেষ
করে দিয়েছে। যেহেতু হিন্দুসমাজে
বিধবা বিবাহের প্রচলন ছিলো না,
সেহেতু প্রথমত যোদ্ধা পুরুষদের বিধবা
স্ত্রীরা এবং পরে সকল ধরণের
বিধবারাই এভাবে মৃত্যুকে শ্রেয় মনে
করে আগুনে আত্মাহুতি দিতে শুরু করে
এবং এটা ছিলো সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায়| হিন্দু
সমাজকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা
করার জন্য নারীদের এই আত্মবিসর্জন,
কালক্রমে হিন্দু সমাজে খুব শ্রদ্ধার
বিষয় হয়ে উঠে এবং যেহেতু সতী
হিসেবেই এবং সতীত্ব রক্ষার জন্য
তারা নিজেদেরকে দাহ করছে, তাই
এর নাম হয়ে উঠে সতীদাহ এবং শত শত
বছর ধরে চলার ফলে এটা এক সময় হিন্দু
ধর্মের অঙ্গ হয়ে উঠে।
আমার এই তথ্যগুলো অনেকের কাছেই
বানানো গল্প মনে হতে পারে;
তাদের জন্য মহাভারত থেকে কিছু
দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। এগুলো পড়ার সাথে
সাথে এটা মাথায় রাখবেন যে,
রামায়ন-মহাভারতেযেগুলি নেই,
সেগুলো হিন্দু ধর্ম ও সমাজের কোনো
প্রথা নয়।
মহাভারতের গল্প যার থেকে শুরু,
সেই রাজা শান্তনু, শেষ বয়সের দিকে
মৎস্য রাজার কন্যা সত্যবতীকে বিয়ে
করে। অতঃপর সত্যবতীর দুই পুত্র জন্মানোর
পর রাজা শান্তনু মারা যায়।
প্রতিশ্রুতি মোতাবেক, রাজা শান্তুনুর
জ্যেষ্ঠপুত্র ভীষ্ম, রাজা না হওয়ায়,
রাজাবিহীন হস্তিনাপুর রাজ্যকে
ভীষ্ম ও সত্যবতী মিলে ততদিন পর্যন্ত
শাসন করে, যতদিন না সত্যবতীর পৌত্র
পাণ্ডুর রাজ্যভিষেক হয়। পরে পাণ্ডু,
রাজ্য ছেড়ে বনে চলে গেলে, অন্ধ
ধৃতরাষ্ট্রকে কার্যনিবাহী রাজা
নিযুক্ত করা হয় এবং ধৃতরাষ্ট্র কর্তৃক
অপমান সইতে না পেরে সত্যবতী বনের
এক আশ্রমে চলে যায় এবং সেখানেই
তার মৃত্যু হয়- কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কিছু বছর
আগে। এখানে খেয়াল করুন, জীবিত
সত্যবতীকে কিন্তু রাজা শান্তনুর
মৃতদেহের সাথে দাহ করা হয় নি।
পরে, মহাভারতের আরেক ঘটনায়,
বনে, পাণ্ডুর মৃতদেহের সাথে, পাণ্ডুর
দ্বিতীয় স্ত্রী মাদ্রির মৃতদেহকে এক
সাথে দাহ করা হয়। এই ঘটনাকে কেউ
সহমরণের দৃষ্টান্ত হিসেবে ভুল করতে
পারেন, তাই এই ঘটনাটা বিস্তারিত
তুলে ধরছি: পাণ্ডু যেদিন কুন্তীকে
বিয়ে করে, সেইদিন রাতেই পাণ্ডুকে
যুদ্ধের জন্য যাত্রা করতে হয়। কিন্তু যুদ্ধ
জয় করে ফেরার পথে, মন্দ্র রাজ, তার
পালিত মেয়ে মাদ্রির সাথে পাণ্ডুর
বিয়ে দিয়ে দেয়
ফলে মাদ্রীকে
ReplyDeleteনিয়ে পাণ্ডু হস্তিনাপুর ফিরে আসে।এরপর মাদ্রীর জেদের ফলে পাণ্ডু দুই
স্ত্রীকে নিয়ে বনে বেড়াতে যায়
এবং সেখানে মাদ্রীর ইচ্ছাকে পূরণ
করার জন্যই হরিণ রূপে সহবাস রত এক ঋষি
ও তার স্ত্রীকে পাণ্ডু তীর মেরে
হত্যা করে বসে।ঋষি মারা যাওয়ার
পূর্বে স্বরূপে পাণ্ডুকে দেখা দেয় এবং
এই অভিশাপ দেয় যে,পাণ্ডু যখনই তার
কোনো স্ত্রীর সাথে সহবাস করবে,তারপরই সে মারা যাবে।এরপর পাণ্ডু
প্রাসাদে ফিরে আসে এবং সবাইকে
জানায় যে তার মাধ্যমে এক ঋষি হত্যা
হয়েছে।এর প্রায়শ্চিত্য করার জন্য সে
রাজ্যের দায়িত্ব ছেড়ে
স্থায়ীভাবে বনে চলে যেতে চায়
এবং চলেও যায়।এরপর বনেই চলছিলো
পাণ্ডু ও তার দুই স্ত্রীর দিন।এই ফাঁকে
দেবতাদের আশীর্বাদে কুন্তীর সন্তান
লাভের বরের কথা জানতে পেরে
পাণ্ডুর অনুমতি নিয়ে কুন্তী তিন পুত্র
এবং মাদ্রী দুই পুত্র লাভ করে।এই তিন ও
দুই মিলেই হয় পাঁচ পাণ্ডব।এর বেশ কয়েক
বছর পর,হঠাৎ,পাণ্ডু একদিন মাদ্রীর
প্ররোচনায়,তার উপরে থাকা
অভিশাপের কথা ভুলে গিয়ে মাদ্রীর
সাথে সহবাসে লিপ্ত হয় এবং সহবাস
শেষে মারা যায়।মাদ্রীর কারণেই
যে পাণ্ডুকে বনের জীবন বেছে নিতে
হয়েছিলো এবং তার কারণেই আবার
পাণ্ডুর প্রাণ গেলো,এসব ভেবে এবং
স্বামীর শোক সইতে না পেরে মাদ্রী
আকস্মিকভাবে প্রাণ ত্যাগ করে এবং
স্বামী স্ত্রী দুইজনকেই এক সাথে দাহ
করা হয়।মুসলিম বা ইংরেজ আমলের
সতীদাহের যে রূপকে আমরা জানি,এই
ঘটনা সেরকম কিছু নয়।সবচেয়ে বড় কথা
হলো,পাণ্ডুর সাথে তার জীবিত স্ত্রী
কুন্তীকে কিন্তু দাহ করা হয় নি।কুন্তী,কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পরও বেঁচে ছিলো।সুতরাং মহাভারতের যুগে সতীদাহের
কোনো ঘটনা ই ঘটে নি।আর
যেহেতু_রামায়ণ,
মহাভারতেরও_আগের_কাহিনী
সেহেতু_রামায়ণে_সতীদাহের_কোনো_ঘ
টনা_থাকাই_সম্ভব_নয়।মহাভারতের এই
ঘটনাগুলি থেকে এটা স্পষ্ট যে,হিন্দুধর্মের যেসব প্রামান্য গ্রন্থ
সেগুলোতে সতীদাহের মতো কোনো
ঘটনার উল্লেখ নেই,তাই সতীদাহ
হিন্দুধর্মের কোনো সার্টিফায়েড
প্রথা নয়।তাহলে মধ্যযুগে সতীদাহপ্রথা এলো
কোথা থেকে?এই প্রশ্নের জবাব ভাবুন,আর আমার উপরে বর্ণনা করা সিন্ধুর
রাজপরিবারের মেয়েদের আগুনে
আত্মবিসর্জন দেওয়ার ঘটনার
বিষয়গুলোকে মিলিয়ে দেখুন।দুই এ দুই এ
চার এমনিতেই মিলে যাবে।এরপরও অনেকেই মনে করতে পারেন,সিন্ধুর রাজ পরিবারের মেয়েদের
দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে,পরবর্তীতে
পরাজিত রাজ পরিবারের মেয়েরা
আগুনে ঝাঁপ দেবে এবং কালক্রমে এটা
একটা প্রথা হয়ে দাঁড়াবে,এটা
কোনো কথা হলো?প্রথা যে কত শক্তিশালী একটা
ব্যাপার,সেটা বোঝানোর জন্য আমার
বাস্তব অভিজ্ঞতার একটা ঘটনা বলছি:সব হিন্দু পরিবারে ভাইফোঁটার উৎসব
থাকলেও,আমার খুব ঘনিষ্ঠ একটি হিন্দু
পরিবারে কোনো ভাই ফোঁটা উৎসব
নেই।এর কারণ খঁজুতে গিয়ে জানতে
পারলাম,দুই পুরুষ আগের কোনো এক ভাই
ফোঁটা উৎসবের পরের দিন,যে ভাইকে
ফোঁটা দেওয়া হয়েছিলো,সেই ভাই ই
মারা যায়।এর পর ওই পরিবারে এই
বিশ্বাস ঢুকে যায় যে,তাদের জন্য
ভাইফোঁটা অশুভ।তার পর থেকেই তারা
এই উৎসব বাদ দেয় এবং এখনও প্রায় ১০০
বছর পরও পারিবারিক প্রথাকে মেনে
তারা ভাইফোঁটা পালন করে না।
প্রথা এমনই শক্তিশালী একটা
ব্যাপার,যখনই তা কোনো কারণে বন্ধ
হয়, তা যেমন বন্ধই থাকে,তেমনি যখনই
কোনো প্রথা, কোথাও থেকে শুরু হয়,সেটাও চলতেই থাকে।তাই যখনই
কোনো হিন্দু রাজার রাজ্যের উপর
মুসলমান শাসকদের দৃষ্টি পড়েছে এবং ওই
হিন্দু রাজারা যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত
হয়েছে,তখনই মুসলমান সৈন্যদের ধর্ষণ
এমনকি মৃতদেহকেও ধর্ষণের কবল থেকে
রক্ষা করার জন্যই পূর্বসুরী সিন্ধু
রাজপরিবারের মেয়েদের দৃষ্টান্ত
অনুসরণ করে পরবর্তী রাজ পরিবারের
মেয়েদের এরকমটা ঘটানো অসম্ভব কিছু
নয়,যেহেতু পরাজিতদের মেয়েদেরকে
মুসলমান সৈন্যরা নির্বিচারে ধর্ষণ
করতো,কোরান হাদিসেও যার অসংখ্য
উদাহরণ আছে, এবং আছে মুসলমানদের
ইতিহাসেও।সেহেতু সতীদাহ প্রথার
উৎপত্তির ব্যাপারে আমার অনুসন্ধান ও
জানাকে আমি ১০০% সঠিক ও সত্য বলে
মনে করি।রাজা রাম মোহন রায়,তার
বাল্যকালে তার বৌদিকে সতী হতে
দেখেন;এই বিষয়টি তাকে
গভীরভাবে ব্যথিত করে।পরে তিনি
১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর,বৃটিশ
সরকারের ভাইসরয়, "উইলিয়াম
বেন্টিংক" এর সহায়তায় সতীদাহ বন্ধে
একটি আইন পাশ করাতে সমর্থ হন।এভাবেই ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ
হয় সতীদাহ প্রথা।কিন্তু এই সতীদাহ
প্রথা বন্ধেও মুসলমানরা খুঁজে পায়
মুসলিম শাসকদের অবদান।এই সব মূর্খদের
উদ্দেশ্যে বলছি,মুসলমান শাসকরা
সতীদাহ বন্ধ করতে উদ্যোগী হলে এটার
জন্য রাম মোহন রায়কে এত ফাইট করতে
হতো না,আর এটা ১৮২৯ সালের পর,ইংরেজ আমলে বন্ধ না হয়ে ১৭৫৭
সালের আগে হতো।মুসলমানদের এ এক
সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র মুসলিম শাসকদের
অত্যাচারের কারণেই যে ভারতে
সতীদাহ প্রথার উদ্ভব হয়েছে, এই
ইতিহাসকে চাপা দিতেই তাদের এই
অপপ্রচার।কিন্তু সত্য চাপা থাকে না,সত্য একদিন না একদিন প্রকাশ হয় ই এবং
তা আজ প্রকাশিত হয়েছে।
#জয়_শ্রীরাম