Thursday, 25 February 2016

নারীর পোশাক নয়, আমাদের মানসিক দৃষ্টিভংগির পরিবর্তন দরকার।

নারীর পোশাক নয়, আমাদের মানসিক দৃষ্টিভংগির পরিবর্তন দরকার। ভারতে ধর্ষণ নিয়ে নিয়ে চমৎকার একটি নিবন্ধ লিখেছেন বেলজিয়ামের অধ্যাপক জ্যাকব ডি রুভার৷ সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘ভারতে প্রতি ঘণ্টায় তিন জন নারী ধর্ষিত হয় – এই তথ্য জেনে ইউরোপের সংবাদ মাধ্যম ভুলে যাচ্ছেন যে, ঘণ্টায় তিনজন ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন ১২৫ কোটি মানুষের দেশে৷ এক কোটি দশ লাখ মানুষের দেশ বেলজিয়ামেই কিন্তু প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একজন ধর্ষণের শিকার হয়৷ ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের জনসংখ্যা ৫ কোটি ৬০ লাখেরও কম৷ সেখানে প্রতি বছর ধর্ষণের শিকার হয় প্রায় ৭৮ হাজার নারী৷ তার মানে সেখানে প্রতি ঘণ্টায় ৯ জনেরও বেশি নারীকে ধর্ষণ করা হয়৷ ভারতে প্রতি বছর ১ হাজারের মধ্যে ১ দশমিক ৮ জন নারী ধর্ষিত হয়, বেলজিয়ামে সংখ্যাটা প্রায় ৩০, যুক্তরাষ্ট্রে ২৭ দশমিক ৩ আর ব্রিটেনে ২৮৷'' বেলজিয়ামের অধ্যাপক এ সব তথ্য দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, ধর্ষণ শুধু ভারতে নয়, সব দেশেই হয়, তথাকথিত উন্নত দেশগুলোও এক্ষেত্রে মোটেই পিছিয়ে নেই৷ সেদিন কাগজে পড়েছি-ফ্লোরিডারএক উন্মুক্ত সৈকতে দিনের বেলা শত শত মানুষের উপস্থিতিতে এক নারীকে কলেজের কয়েকজন বখাটে ছাত্র মিলে ধর্ষণ করলেও কেউ বাধা দিতে এগিয়ে আসেননি।এই ঘটনা ঘটার সময় কেউ পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগও করেননি। কী ঘটছে তারা দেখেছেন কিন্তু কেউ এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল না।আমেরিকার লোকজনের এই মানসিকতার কারনে ক'দিন আগেই ওবামা স্বীকার করেছেন , ‘‘যুক্তরাষ্ট্রেপ্রতি পাঁচজনে কমপক্ষে একজন নারী হয় ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন, নয়ত ধর্ষণের হাত থেকে কোনোভাবে বেঁচে দুঃস্বপ্নকে সঙ্গী করে জীবনযাপন করছেন৷ মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়েরসামাজিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ৭টি মুসলিমপ্রধান দেশ- তিউনিসিয়া, মিশর, ইরাক, লেবানন, পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং তুরস্ক জরিপ পরিচালনা করে দেখেছেন-এই ৭দেশের মধ্যে তুরস্ক এবং লেবাননের মেয়েরা সবচেয়ে বেশি খোলামেলা পোশাক পরে, কিন্তু এই দেশ দুটিতে অন্য ৫টি দেশের তোলনায় নারীরা ধর্ষিত হয় একেবারেই কম, পক্ষান্তরে সৌদিআরব এর মত দেশে নারীরা শরীয়াহ মেনে পোষাক পরিধান করে। বালুকাময় মরু প্রান্তরে বালু ঝড় থেকে বাঁচতে কিংবা রৌদ্রের প্রখর তাপ থেকে রক্ষা পেতে ঐ অঞ্চলের মানুষ বরাবরই পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে রাখে।কিন্তু এসব বেদুইনদের নারী নির্যাতন সব বর্বরতাকে হার মানায়। সেখানে নতুন আইন করা হয়েছে, যে সমস্ত নারীর চোখ সুন্দর বা আবেদনময়ী, তাদের চোখে সানগ্লাস আটাতে হবে! চোখের ইশার দিয়েই যেন তারা দুর্বলচিত্ত পুরুষের চরিত্রে স্থলন ঘটাতে না পারে। কিন্তু তারপরও কি সৌদি নারীরা নিরাপদে থাকছেন? তাদের পোষাক কি পুরুষদের যৌন-লালসা রোধ করতে পারছে? বরং সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের সকল দেশের লোকেদের লাম্পট্য জগৎ জোড়া বিপুল কুখ্যাতি কুড়াচ্ছে। অথচ আমাদের পাহাড়ি নারীরা মাত্র একটি কাপড় ব্যবহার করে শরীরের উপরের ও নিচের অংশ ঢেকে থাকে। শহরের নারীরা ওই পাহাড়ের নারীদের চেয়ে শরীরের বেশি অংশ ঢেকে রাখে।তারপরও তারা কেন নিগ্রহের শিকার হয়? বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে প্রতিদিন যতগুলো শিশুধর্ষণ হয়, বালিকা ধর্ষণ হয় তার কারণ কী পোষাক? পোষাক ই যদি সবকিছুর জন্য দায়ী হবে,তাহলে ৭১ এ এত এত নারীরা ধর্ষিত হয়েছে, তাদের সবার পোষাক উগ্র ছিল কি? বিশ্বে ফিনল্যান্ডের নারীরা সবচেয়ে বেশি নারীস্বাধীনতা ভোগ করে (যত্রতত্র স্বল্পবসনা হয়ে ঘুরে বেড়ানো এবং মাতাল হওয়া থেকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পর্যন্ত সবকিছু), সে দেশে ধর্ষন নেই বললেই চলে।কারন সেখানে নারী সম্পর্কে পুরুষের দৃষ্টিভংগি অনেক উন্নত, তাছাড়া কঠোর শাস্তি নারী নির্যাতনের জন্য। আসলে পোশাক মেয়েদের শ্লীলতাহানীর হাত থেকে বাঁচায়-এ কথা ঠিক নয়। পুরুষের লম্পট প্রবৃত্তি মেয়েদের পোশাক দেখেই জাগ্রত হয় না।লম্পট পুরুষরা বন্ধুদের নিয়ে আগে থেকে প্ল্যান করে এগোয় প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য। এখন এই অসুস্থ পুরুষদের কামনা থেকে বাঁচাতে আমরা দেশের সব মেয়েকে বোরখায় বন্ধী করে রাখি, তা হবে রবী ঠাকুরের জুতা আবিস্কারের মত, রাজার পায়ে যাতে ধুলা না লাগে, তা করতে গিয়ে কি আমরা জগত ধুলা-কাদাময় করে ফেলবো। নাকি সেই অল্পসংখ্যক ধর্ষকামী বখাটেদের আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে সুন্দর সমাধান করব? আমাদের দেশে দেখা যায়, শতকরা নব্বই ভাগ ঘটনায় নারীটি নির্যাতনকারীকে চেনে। গ্লোবাল স্টাডি বলছে প্রায় ৩০% ক্ষেত্রে অপরাধী নারীটির নিকট আত্মীয় আঙ্কেল, ভাই, বাবা কিংবা কাজিন। প্রায় ৬০% ক্ষেত্রে ভিকটিম নির্যাতনের শিকার হয় প্রতিবেশী, পরিবারের বন্ধু স্থানীয় কোন ব্যক্তি, শিক্ষক দ্বারা এবং কেবল মাত্র ১০ শতাংশ ক্ষেত্রেই শিশুটি নির্যাতিত হয় সম্পূর্ণ অচেনা কারো মাধ্যমে। আমার মা-বোন আলাদা মানুষ, আলাদা সত্ত্বা। তারা কী পোশাক পরবেন সেটা একান্তই তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।কোন মেয়ে কতটা খোলামেলা পোশাক পরলো এটা তার ব্যাজতিগত ব্যাপার।কিন্তু ব্যক্তির লাম্প্ট্য যৌন অপরাধ প্রবণতা নির্ভর করে তার শিক্ষা, সমাজ ও পরিবারে বিদ্যমান মানবিক মূল্যবোধ, সুস্থ বিনোদন প্রাপ্তি, আইনের শাসন ইত্যাদির উপর। যে কোন নারী একটা সমাজে কতটা নিরাপদ তার দ্বারা নির্ণয় করা যায় সে সমাজ কতটা সভ্য কিম্বা কতটা অসভ্য। আমাদের প্রাচীন ইতিহাসের দিকে তাকালেও দেখা যাবে, মুসলিম শাসনের পূর্বে এদেশের নারী-পুরুষ উভয়েই একই ধরনের পোশাক পরিধান করতেন। নীহাররঞ্জন রায় তার ‘বাঙ্গালির ইতিহাস’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘নারী এবং পুরুষ উভয়ই পরতেন একটি মাত্র বস্ত্র-শাড়ি অথবা ধুতি।…নারী ও পুরুষ উভয়ই শরীরের উপরের অংশ খোলা রাখতেন। কই, আমাদের পূর্বপুরুষদের নারীর শ্লীলতাহানীর তো কোন ইতিহাস নেই। নারীর বক্ষ উন্মুক্ত সেই অজুহাতে শ্লীলতাহানি বা ধর্ষণ যদি হত, তাহলে আমাজন রেইন ফরেস্ট বা ক্যলর্ফোনিয়ার ন্যুড ভিলেজগুলিতে মেয়েরা নিরাপদে বসবাস করতে পারতো না।

1 comment:

  1. প্রকৃতপক্ষে পোশাক নয়, মানসিক দৃষ্টিভংগির পরিবর্তন দরকার।
    # নারীকে পণ্য ও ভোগের বস্তু মনে না করে মানুষ হিসাবে দেখতে হবে
    # মূল্যবোধের অবক্ষয় ও প্রকৃত শিক্ষার অভাব মুক্ত হতে প্রচুর পড়তে হবে।
    # সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে,
    # আইনের শাসন বাস্তবায়ন করতে হবে। Avijit Pratap Roy

    ReplyDelete