●●গরু হিন্দুদের মা,গরুর পেট থেকে তো গরুর বাচ্চা হয় মানুষের বাচ্চা তো হয়না তাহলে গরু কি করে মানুষের মা হয়?
☆-------গরু হিন্দুদের মা এটা কোন গ্রন্থে বলা আছে কী?
অতি সুপ্রাচীনকাল হতে ভারতবর্ষের অনেক রাজা-মহারাজার গোপালন করতেন। মহাভারতে বর্ণিত, বিরাট রাজার ষাট হাজার গাভী ছিল। কে কতো বেশী ধনশালী ও সমৃদ্ধশালী তা ওই রাজ্যের গোশালা ও গরুর সংখ্যার উপর নির্ভর করতো। "আইন-ই-আকবরী" থেকে জানা যায়, মুঘল সম্রাট আকবরেরও শতশত গাভী ও বলদ ছিল। তিনি মুসলমান হয়েও ভারতবর্ষে গোহত্যা নিষিদ্ধ করেছিলেন। ছোট বেলায় বাড়ীর মা, ঠাকুরমাগন খুব ভোরে ঘুম থেকে গরু ঘরের গোবর ঘটিতে নিয়ে পরিস্কার জলে গুলে তা বাড়ী আঙ্গিনায় ছিঁটাতেন, পূজো কিংবা সন্ধ্যা আহ্নিকের জায়গা গোবর মিশানো জল ছিঁটানো কিংবা ঘরের ভিঁটি লেপন করতেন,আসলে গোবর জল ছেটাবার জন্যই পোকামাকড় এর উপদ্রব কম হয়। প্রাচীন আর্য ঋষিদের ভাবনা নির্দেশনা হলেও আধুনিক বিজ্ঞানে প্রমাণিত সত্য হিসাবে প্রকাশ পাচ্ছে। গাভী কৃষ্ণের বাহন, ষাঁড় শিবের বাহন এবং গোজাতি হত্যা মহাপাপ।
পৃথিবীতে সম্ভবত গো-জাতিই একমাত্র প্রাণী যা খায় ঘাস, দেয় দুধ। মল ও মূত্র ত্যাগের মাধ্যমে প্রকৃতিতে তথা
আমাদেরকে দেয় জৈব সার ও জীবানু নাশক উপাদান। সম্ভবত একসঙ্গে এ ধরনের
একাধিক উপযোগীতা পৃথিবীর অন্য কোন পশুকূলের মধ্যে দেখা যায় না। আমরা জানি যে অন্য পশুর দুধের চাইতে গরুর দুধই একমাত্র পুষ্টিকর, সস্তা ও সহজলভ্য যা দুধ শিশু বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবাই খেয়ে থাকে। যে সব মায়ের বুকে দুধ থাকে না তাঁরা তাঁদের শিশুকে গরুর দুধ খাওয়ান। এছাড়া গরুর দুধ থেকে ঘি,মাখন,মিষ্টি ইত্যাদি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাদ্যবস্তু তৈরি হয় যা অন্য প্রানীর দুধ থেকে পাওয়া যায় না। বর্তমানে চিকিৎসকেরাও পথ্য হিসাবে গরুর দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। অপর দিকে কৃষি সভ্যতার শুরু থেকে পুরুষ গরুই (ষাঁড় ও বলদ) একমাত্র প্রানী যা মানুষকে হাজার হাজার বছর ধরে অবাদি চাষের ভূমি কর্ষণ করে সহজে অধিক ফসল ফলাতে সাহায্য করেছে। এত উপকারী একটি প্রাণী কে মা বলে সম্মান জানানো কেন যায়না এটাই বোধগম্য নয়। ॐ卐
●●গরু তাদের মা, তাই তারা দুধ খায়, গোশত খায়না। অথচ ওই মায়ের চামড়া দিয়ে জুতা বানিয়ে তা পায়ে দেয়। কেন মায়ের এই অমর্যাদা?
☆--- গোহত্যা ও গোমাংস খাওয়া কখনই ভাবি না। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে মৃত গরুর চামড়া ব্যবহারে নিষেধ আছে এমন উল্লেখ নেই। উদাহরণঃ মানুষ হত্যা পাপ। কিন্তু মৃত ব্যক্তির চোখ দান পাপ না। মনে রেখো প্রতিটা প্রাণীর অস্তিত্ব বর্তমান না থাকলে সৃষ্টির নিয়ম লঙ্ঘিত হবে। মাংস ভোজী প্রাণীদের মেরে ফেললে তৃণ ভোজী প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং তৃণ সংকটে বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাবে। এই কারণেই বাঘ ও সিংহ বাহন ধারণ করেছেন দেবীরা। দেবীর বাহন বলে সিংহ ও বাঘকে হত্যা করা যাবে না। সিংহ ও বাঘকে শক্তির প্রতীক হিসাবেও দেখা হয়। আবার দেখুন ইঁদুর, গরু, প্যাঁচা, ঈগল, সাপ, ময়ূর, হাঁস, হাতি_সহ বিভিন্ন প্রাণীকে বাহন হিসাবে ধারণ করেছেন বিভিন্ন দেবতারা। আবার শ্রী রামের কথা মনে করলেই বানর ও হনুমানের কথা মনে পড়ে। প্রজাপতির বিশাল স্থান আছে সনাতন দর্শনে। শুধু ইঁদুরের কথাই যদি বলি তবে বলতে হয়, মানবের কোন উপকারে এই প্রাণীটি তেমন কোন ভূমিকা রাখে না। তাহলে কেন ইঁদুরকে আমরা রক্ষা করবো? রক্ষা করবো এই কারণেই যে, ইঁদুরকে খেয়ে বেঁচে থাকে এমন প্রাণী মানব ও প্রকৃতির উপকারে আসে। তাই সব প্রাণীর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং রয়েছে বলেই এই প্রাণীগুলিকে দেবতাদের বাহন করে রক্ষা করার জন্য বলা হচ্ছে। ইকোসিস্টেমে এক প্রাণী অন্য প্রাণীর উপর নির্ভরশীল। খাদ্য চেইনের একটি বিচ্ছিন্ন হলে অনেকগুলি প্রাণী অস্তিত্ব হুমকিতে পড়ে। যেমন ধরুন গরুকে রক্ষা করতে যে টিকা দেওয়া হয় সেটা শকুনের জন্য বিষ। টিকা গ্রহণকারী গরু মারা গেলে ওই মৃত গরুকে শকুন খেলে শকুন মারা যায়। গরু মারা গেলে সেই গরুকে এখন নদীতে বা খালে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, এতে জল দূষিত হয়। কিন্তু শকুন মৃত প্রাণীগুলিকে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে প্রকৃতি দূষণ থেকে রক্ষা করতো। সুতরাং বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, আমাদের পৌরাণিক নিয়ম কানুনগুলি কালজয়ী ও বৈজ্ঞানিক। যে
ইকোসিস্টেমের প্রয়োজনীয়তার
কথা আমরা আধুনিক যুগে জানি তা বৈদিক ঋষিরা খ্রীষ্টপূর্ব 7000 সালে উপলব্ধি করেছে। এতেও যদি মনে হয় তারা ভুল ছিল তাহলে তুমি মহা মূর্খ। ॐ
卐
●●গরুর চামড়ার ঢোল না পিটালে তাদের পূজা হয়না, গরুকে হত্যা করে তার চামড়া দিয়ে ঢোল বানাতে হয়। কেনো মায়ের এই পরিনতি?
☆--------- একটু আগে আমাদের কশ্চেন করা হয়েছিল। কেন আমরা গরুকে মা বলি? গোস্ত খাই না? অর্থাৎ পরোক্ষ্যভাবে স্বীকার করা হয়েছিল হিন্দুরা গরু মারে না। আবার এখন বলছেন ঢোল করতে হলে গোরুকে হত্যা করতে হয়। আচ্ছা মৃত গরুর চামড়া দিয়ে কী ঢোল হয় না? আসলে আপনাদের যুক্তির আধার একটা- হিন্দু সম্পর্কে মিথ্যা রটনা। গরুর চামড়া ছাড়া মহিষের চামড়ায়ও তো ঢোল হয়। আর দুর্গা পূজায় ঢাক বাজানো হয়। একটা মৃত গরুর চামড়া এর মধ্যেও তার অস্তিত্ব নিহিত থাকে। সোজা ভাবে বলতে গেলে ওই ঢাক বা ঢোল উভয়েই দেবীর শুভ আগমনী বার্তা বহন করে। মৃত্যুর পরেও সে সম্মান পায় পূজা-অর্চনার দ্বারা। একটা পশু পাখিকে সম্মান জানায় এমন ধর্ম পৃথিবীতে আর আছে কী? কারণ হিন্দু ধর্ম মানবতার ধর্ম। এই ধর্ম শেখায় আমরা সকলে সমান। একটা গাছের প্রাণ আছে এটা বৈজ্ঞানিকরা আধুনিক যুগে জেনেছে। আর বৈদিক যুগে এই গাছকেই দেবতা রূপে পূজো করা হতো। কারণ বৈদিক যুগ আমাদের শিখিয়েছে মানবতা-সত্য-অহিংসা।
বৈদিক যুগ পৃথিবীকে সর্বপ্রথম উপলব্ধি করায় মানুষের মতো বৃক্ষদেরও প্রাণ আছে। আজ বিশ্বে সবাই শান্তি চায় এই শান্তির বাণী ও বৈদিক ঋষিদের শেখানো।ॐ Soumen Halder
ReplyDelete