বর্তমানে ভারতে আর্য অনার্য নিয়ে ঝড় উঠছে, আমি ধারাবাহিক লেখায় প্রমাণ করে দেবো আর্যরা বহিরাগত নয়, এটা ইংরেজ দের ষড়যন্ত্র।
আজ প্রথম পর্ব
( লেখক শামসুজ্জোহা মানিক এর থেকে সংগৃহীত)
মানুষ সামনে এগিয়ে যাবার প্রেরণা পায় তার অতীত ইতিহাসের ভিতরকার গৌরবময় ঐতিহ্য থেকে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরাভারতবর্ষে তাদের উপনিবেশিক শাসনকালে ভারতবর্ষের জাতিসমূহ এবং জনগণকে এই গৌরবের ঐতিহ্যবোধ থেকে বঞ্চিত করে তাদেরকে চিরপদানত করে রাখার উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষের এক মিথ্যা ইতিহাস রচনা করেছিল। এই মিথ্যা ইতিহাস আমাদেরকে শিখিয়েছিল যে, আর্যরা ভারতবর্ষে বহিরাগত ও আক্রমণকারী, তারা ছিল পশুপালক, যাযাবর এবং বর্বর। এবং তারা এও শিখিয়েছিল যে আর্যরা ছিল ইউরোপীয়দের মত শ্বেতাঙ্গ এবং উন্নত নাসা, ইত্যাদি।
আর্য তথা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর আদি গ্রন্থ ঋগ্বেদ, যা কিনা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আদি ধর্মগ্রন্থ, তার ভ্রান্ত, বিকৃত ও প্রতারণাপূর্ণ এক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে তারা এক নির্জলা মিথ্যাচারকে ইতিহাসের নামে চালিয়ে দিয়েছে। যেহেতু তারা শাসক এবং উন্নততর ও পরাক্রমশালী এক সভ্যতার অধিকারী সেহেতু পরাধীন ভারতীয় উপমহাদেশের আধুনিক শিক্ষিত মহল ও পণ্ডিতদের প্রায় সকলে এই মিথ্যাকে সত্য বলে মেনে প্রতারিত হয়েছিল। বিস্ময়ের ব্যাপার হল ১৯৪৭ সালে বিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা এই উপমহাদেশ থেকে বিদায় নেবার ৬৬ বৎসর পরেও এই একই মিথ্যা তত্ত্ব বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানসহ ভারতীয় উপমহাদেশে ইতিহাসের নামে চলছে।
অথচ মুক্তমন নিয়ে ঋগ্বেদ পাঠ করলে যে কোন পাঠকের ব্রিটিশ তথা পাশ্চাত্য পণ্ডিতবর্গের বেদ ব্যাখ্যার এই অন্তঃসারশূন্যতাকে ধরতে পারার কথা। ঋগ্বেদের কোথায়ও এ কথা বলা নাই যে, তার রচয়িতা আর্যরা সপ্তসিন্ধু অঞ্চল তথা ভারতবর্ষে বহিরাগত। বরং ঋগ্বেদ রচয়িতা ঋষিরা বারবার সপ্তসিন্ধুকে নিজেদের আবাসভূমি বলেছেন। শুধু তাই নয় ঋগ্বেদ থেকে বেরিয়ে আসে উন্নত নগর সভ্যতার চিত্র। ঋগ্বেদের ঋষিদের দ্বারা বর্ণিত আর্যদের বিশাল বিশাল ভবন, নগর, লাঙ্গল ও জলসেচ নির্ভর উন্নত কৃষি ব্যবস্থা, বস্ত্র বয়ন, ধাতু শিল্প, সমুদ্র বাণিজ্য ইত্যাদি কোনটিই যাযাবর পশুপালক অথবা অসভ্য আর্য সমাজের চিত্র অঙ্কন করে না।
এটাও উল্লেখযোগ্য যে, ঋগ্বেদসহ প্রাচীন সকল ভারতীয় সাহিত্যে আর্য শব্দটি কোন জাতিকে নির্দেশ করে না। বরং এটি একটি গুণবাচক শব্দ মাত্র। স্মরণাতীত কাল থেকে প্রাচীন ভারতবর্ষে সভ্য, ভদ্র, মহৎ, উন্নত, শ্রেষ্ঠ ইত্যাদি গুণ বাচক শব্দের সমার্থক হিসাবে এটি সর্বদা ব্যবহৃত হত। মর্যাদা সূচক সম্বোধন হিসাবেও আর্য শব্দ ব্যবহৃত হত। ইউরোপীয় পণ্ডিতরা যেভাবে জাতিবাচক শব্দ হিসাবে আর্য শব্দকে ব্যবহার করেছেন প্রকৃত ঘটনা মোটেই তা ছিল না। কাজেই যাযাবর ও বহিরাগত হিসাবে ভারতবর্ষে আর্য জাতির আক্রমণ ইউরোপীয় পণ্ডিতদের দ্বারা তৈরী ইতিহাসের নামে একটি কল্পকথা মাত্র।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment