Friday, 27 November 2015

আর্যরা বহিরাগত নয় 3

বর্তমানে ভারতে আর্য অনার্য নিয়ে ঝড় উঠছে, আমি ধারাবাহিক লেখায় প্রমাণ করে দেবো আর্যরা বহিরাগত নয়, এটা ইংরেজ দের ষড়যন্ত্র। তৃতীয় পর্ব ( লেখক শামসুজ্জোহা মানিক এর থেকে সংগৃহীত) ১৯৯০ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আমাদের উভয়ের ইতিহাসের সত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা এবং সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই সত্যটিও ক্রমে স্পষ্ট হয়েছে যে ভারতবর্ষে আর্য আক্রমণ তত্ত্ব ইউরোপীয় পণ্ডিতদের অনিচ্ছাকৃত জ্ঞানতাত্ত্বিক ভ্রান্তি থেকে উদ্ভূত নয়, বরং এর পিছনে মূলত ক্রিয়াশীল ছিল এবং আজও আছে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য রক্ষার অপরাজনীতি অব্যাহত রাখার কূটকৌশল। ভারতীয় উপমহাদেশের কাছে নিজেদের সভ্যতার ঋণ অস্বীকার করতে চেয়ে ইতিহাসের নামে পাশ্চাত্যের এই কূটকৌশল ও মিথ্যাচার। কারণ প্রায় পৌনে চার হাজার বছর পূর্বে সিন্ধু সভ্যতা ধবংসের পরবর্তী কালে সেখানকার অধিবাসীদের একাংশ ইউরোপে গিয়ে সেখানে তাদের উন্নততর ভাষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করে। ফলে বৈদিক বা সংস্কৃতের উত্তরসূরি হিসাবে ইংরাজী, ফরাসী, জার্মান, লাতিন ইত্যাদিসহ ইউরোপের অধিকাংশ ভাষা জন্মলাভ করেছে যেগুলিকে ভাষা পণ্ডিতরা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বলেন। সর্বোপরি মিথ্যা ইতিহাস তৈরী করে তারা এই উপমহাদেশের জনগণকে বুঝাতে চেয়েছে যে দাসত্বই তাদের নিয়তি এবং উপমহাদেশের গৌরবের কিছু নাই। এই উপমহাদেশের মানুষ যারা তারা সর্বদা বিদেশী আক্রমণকারীদের দ্বারা পরাজিত ও অধীনস্থ হয়ে থাকবে এটাই যেন স্বাভাবিক। ফলে তারা ভ্রান্ত ইতিহাস বোধ সৃষ্টি করে ভারতবর্ষ তথা উপমহাদেশের বিভিন্ন জাতি ও জনগণের মনে হীনতা বোধ সৃষ্টি করে রাখতে চেয়েছে। অথচ এটিই সত্য যে আর্যরা শুধু যে সিন্ধু সভ্যতার নির্মাতা এবং অধিবাসী তথা ভারতবর্ষের দেশজ মানুষ তাই নয়, উপরন্তু তারাই প্রায় পৌনে চার হাজার বছর পূর্বে সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংস হলে এই উপমহাদেশ থেকে সুদূর ইউরোপ পর্যন্ত গিয়ে সেখানে সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করে। শুধু তাই নয়, তারা প্রাচীন পৃথিবীর এমন এক সভ্যতা নির্মাণ করেছিল যার কোন তুলনা প্রাচীন পৃথিবীর ইতিহাসে নাই। ব্যাপক প্রত্নতাত্ত্বিকআবিষ্কারসমূহ দ্বারা প্রত্নতাত্ত্বিকরা মূলত একমত হয়েছেন যে, প্রাচীন পৃথিবীর সমকালীন বাকী আর তিনটি সভ্যতা যেমন মিসর, মেসোপটেমিয়া এবং চীনের চেয়েও অনেক বৃহৎ অঞ্চল ব্যাপী প্রতিষ্ঠিত সিন্ধু সভ্যতা ছিল এমন একমাত্র প্রাচীন সভ্যতা যা ছিল প্রভূত পরিমাণে জনকল্যাণবাদী এবং মূলত শান্তি নির্ভর বা অহিংস। আমাদের উত্তরাধিকার হিসাবে সিন্ধু সভ্যতার গৌরবময় ইতিহাস এবং সেই ইতিহাসের নির্মাতা হিসাবে আর্যদের গৌরবময় ঐতিহ্যকে তুলে ধরাকে আমরা আমাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য মনে করি। ভারতবর্ষে আর্য আক্রমণ তত্ত্বকে বিরোধিতা করা ইতিহাসের সত্য প্রতিষ্ঠার তাগিদে এবং আমাদের জাতীয় গৌরব বোধ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনেও আমরা অপরিহার্য মনে করি। বিশেষত আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বাঙ্গালী জাতি সিন্ধু সভ্যতার ঐতিহ্যকে অনেক বেশী ঘনিষ্ঠভাবে ধারণ করে। কারণ আমরা মনে করি সংস্কৃতের প্রাচীনতর রূপ যে বৈদিক ভাষায় ঋগ্বেদ লেখা সেটি ছিল সিন্ধু সভ্যতার রাষ্ট্রভাষা। এবং ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে বাংলা ভাষায় সংস্কৃত তথা বৈদিক ভাষার শব্দ সম্ভার অন্য যে কোন ভাষার চেয়ে বেশী। ফলে ইতিহাসের নামে এক বিরাট মিথ্যাচারকে রুখে দাঁড়ানো ভাষাগত বিচারে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাচীন সভ্যতা সিন্ধু সভ্যতার নিকটতম উত্তরাধিকারী হিসাবে বাঙ্গালী জাতির অবশ্য কর্তব্য। আমরা আরও মনে করি পাশ্চাত্যের জ্ঞানতত্ত্বের নামে মূর্খতা অথবা প্রতারণার বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের দেশে বিদ্যমান সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াইকে এগিয়ে নিতে হবে। সুতরাং আমাদের দাবী হোক এই যে, পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদীদের দেওয়া ভ্রান্ত ধারণার দাসত্ব থেকে সমাজ চেতনাকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের যাবতীয় পাঠ্যপুস্তকে ভারতবর্ষে আর্য আক্রমণ তত্ত্বের মত উদ্ভট ও মিথ্যা ইতিহাসকে বাতিল করে আর্যতত্ত্ব ও সিন্ধু সভ্যতা সম্পর্কে সঠিক ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

No comments:

Post a Comment