কিভাবে হিন্দুরা ভারতে ১০০০ বছরের মুসলিম শাসনেও তাদের ধর্ম টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল ???
...আমি দেখেছি মুসলিমরা ইন্টারনেটে এই বলে বড়াই করে যে, যদি ইসলাম এতটা নির্মম হত তবে কিভাবে হিন্দুরা ভারতে ১০০০ বছর ইসলামী শাসনে তারা টিকে ছিল ? যদি ইসলাম তলোয়ারের মাধ্যমে প্রচার হত তবে সকল হিন্দুদের জোড় করে ধর্মান্তরিত করা হত এবং বর্তমানে এদেশে আর কোন হিন্দুই অবশিষ্ট থাকত না ৷ এটা প্রমান করে যে ইসলাম করুনার ধর্ম ৷
এটা এক ধরনের আল তাকিয়া ছাড়া কিছুই নয়, ইসলাম কে মহিমান্বিত করতে মিথ্যাচার করা ফরজ। হিন্দু রা কিভাবে মুসলমান আক্রমণ প্রতিহত করতো সেটা m.a. Khan. এর লেখা জিহাদ বইতে খুব সুন্দর ভাবে ঐতিহাসিক প্রমাণ সহ প্রস্তুত করেছেন, তবে খুব সাধারণ পদ্ধতি ছিলো মুসলমান আক্রমণ করলে হিন্দু রা বন জঙ্গলে পালিয়ে যেত, ভারতে এত বেশী বন জঙ্গল, পাহাড় পর্বত ছিলো যে সেখানে পালিয়ে যাওয়া লোকজন খুঁজে আনা শক্ত কাজ ছিলো।।
বন্ধুবর ঋতঙ্কর দাস আরো কিছু কারণ উল্লেখ করেছে হিন্দুদের অস্তিত্ব রক্ষা ও সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে থেকে যাওয়ার কারন হিসেবে, তবে আর বেশিদিন সংখ্যাগরিষ্ট থাকতে হবে না, জন্মনিয়ন্ত্রণের ফলে হিন্দু রা নিজেরাই নিজেদের সংখ্যালঘু বানিয়ে ফেলছে।
...আমি আমার বন্ধুদের বিস্তারিতভাবে হিন্দুদের টিকে থাকার কারন বর্ণনা করছি ৷ ইসলামের বন্ধুসুলভ ব্যবহারের জন্য নয় বরং এটা সম্ভব হয়েছে হিন্দুদের প্রতিরোধের কারনে ৷ বর্বর মুসলিম দখলদাররা তাদের সর্বোত্তম চেষ্টাই করেছে কিন্তু হিন্দুদের প্রতিরোধের জন্যই এটা সম্ভব হয় নি ৷
১) সিংহ হৃদয় সাহসী পুরুষঃ
শিবাজী, ডেকানের মারাঠা নেতাবৃন্দ, রাজস্থানের মহারানা প্রতাপ, ভরতপুর ও মথুরার জাটগন, রাজপুতানার দূর্গাদাস রাঠোর, বুন্দেলখন্ডের বীর ছত্রসাল, বিজয়নগরের রাজা কৃষ্ণদেব, উত্তর ভারতের শিখ গুরুবৃন্দ, বান্দা বৈরাগী, হরিসিংহ নালওয়া, মহারাজা রঞ্জিত সিংহ এবং নাম না জানা আরো অনেকে ভারতে ইসলামী শাসন প্রতিরোধ করেছিলেন এবং হিন্দুদেরকে গন ধর্মান্তরের হাত হতে রক্ষা করেছিলেন ৷ সত্যিটা হলো মুসলিমরা কখনই পুরো ভারতকে শাসন করতে পারে নি৷ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জানা অজানা যোদ্ধাগন হিন্দুদের মধ্যে আবির্ভুত হয়েছিলেন এবং মুসলিম আক্রমনকারীদের নৃশংসতার হাত হতে হিন্দুদের রক্ষা করেছিলেন ৷
২) হিন্দুদের নৈতিক আচরনঃ
মুসলিমদের সহযোগিতা না করার হিন্দু সামাজিক অনুশাসন, এমনকি তাদেরকে ম্লেচ্ছ হিসেবে নামকরন করে মধ্যযুগে তাদের সাথে একটা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ৷ এর মাধ্যমে মূল ধারার হিন্দু সমাজে মুসলিমদেরকে একধরনের বয়কট করা হয়েছে ৷ এর কারণে সাধারন জনগনের মধ্যে ইসলামের অনুপ্রবেশ অত্যন্ত কম পর্যায়ে হয়েছে, এটিই হিন্দুদের যথাসম্ভব কম সংখ্যক ধর্মান্তরের একটি কারন ৷ মুসলমানদের নিকট হতে একটা নিরাপদ দূরত্বে রাখার জন্যই এই নীতি গৃহীত হয়েছিল ৷ মুসলিম কর্তৃক হিন্দু মন্দিরসমূহ লুন্ঠন করা এবং সেগুলোকে মসজিদে রূপান্তর করার ঘটনাও হিন্দুদের এই আচরন গ্রহন করার পিছনে আরো কারন ৷ হিন্দুদের নিকট পবিত্র হিসেবে বিবেচিত মূর্তিসমূহ ধ্বংস করা, হিন্দুদের মনোবল ভেঙ্গে তাদের দুঃখ দেয়ার জন্য তাদের সামনে হিন্দু মন্দিরসমূহ গুলি গো-রক্তে অপবিত্র করা ৷
আমরা আরো উদাহরন হিসেবে দেখাতে পারি--
মুসলিম আক্রমনকারী কর্তৃক নির্বিচারে হিন্দু মেয়েদের তুলে নিয়ে তাদের হারেম পূর্ণ করা ইত্যাদি ৷ তাই রেওয়া/ ঝাঁসি ও গুজরাট অঞ্চলে যখন মুসলিম আক্রমন হয় তখন চিৎপাওন ব্রাহ্মনরা উত্তর ভারত থেকে শিবাজির রাজ্য মহারাষ্ট্রে স্থানান্তরিত/ আগমন করেন ৷ রাজপুতানাতেও বিভিন্ন সময় একই ঘটনা ঘটেছে ৷
৩) প্রয়োজনে জিজিয়া গ্রহন কিন্তু যজ্ঞোপবিত ত্যাগ না করার মানসিকতাঃ
হিন্দুদের ইসলামে ধর্মান্তরের জন্য নানারকম প্রলোভন দেখানো হত যেমন- নানা ধরনের অর্থের লোভ, উচ্চপদে চাকরীর লোভ, মুসলিম সুন্দরী নারীর লোভ কিন্তু অতি কম সংখ্যক ব্যাক্তিই এই প্রস্তাবগুলো গ্রহন করতেন ৷ বেশিরভাগ হিন্দুই ইসলামি কর (জিজিয়া) দিতেন কিন্তু হিন্দুধর্ম ত্যাগ করতেন না ৷ মুসলিম আক্রমনকারীদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করার এই দ্বিতীয় দফা কৌশল হিন্দুগন কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলো ৷ এটাই তাদেরকে গণ ধর্মান্তকরণের হাত থেকে রক্ষা করেছিলো ৷ আওরঙ্গজেব ইসলামে ধর্মান্তকরণ উৎসাহিত করতে প্রতি হিন্দু পুরুষের জন্য ৫ টাকা এবং হিন্দু নারীদের জন্য ২ টাকা ফতোয়ার মাধ্যমে ধার্য্য করেছিলেন ৷
৪) ভক্তিবাদ আন্দোলনঃ
তাদের সেই সময়ে বিভিন্ন সাধু ব্যাক্তিগন হিন্দুধর্মের বার্তা প্রচার করেন যেটি মুসলমানগন কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া ব্যাথা উপশম করেছিলো ৷ তারা বিশাল সংখ্যায় বলপূর্বক ধর্মান্তরনের হাত থেকে হিন্দুদের রক্ষা করেছিলেন ৷ অধিকন্তু তারা অনেকক্ষেত্রে মুসলিম ঘরে জন্ম নেয়া অনেক লোককে হিন্দুধর্মে ফিরিয়ে এনেছিলেন৷ রাসখান, হরিদাস ঠাকুর উনাদের মত অনেক ব্যাক্তি হিন্দু গুরুর শিষ্য হয়েছিলেন ৷
৫) শুদ্ধি আন্দোলনঃ
শুদ্ধি আন্দোলন বা হারিয়ে যাওয়া ভাইদের পুনরুদ্ধার আন্দোলন, এর মাধ্যমে বলপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে যাওয়া ভাইদের পুনরায় ফিরিয়ে আনা হতো ৷ যেমন নেতাজী পালেকর কে শিবাজী কর্তৃক ফিরিয়ে আনা, বিজয়নগর রাজ্যের হরিহর বুক্কাকে শুদ্ধিকরন করে হিন্দুধর্মে ফিরিয়ে আনা হয়েছিলো ৷ গোভিল সুত্রে শুদ্ধি অনুষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে বর্ণনা করা আছে, এভাবেই হিন্দুরা ধর্মান্তরনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন৷
৬) চিন্তার পবিত্রতাঃ
আমরা দেখেছি বেশিরভাগ মুসলিম শাসকেরা হয় নেশাদ্রব্যে আসক্ত ছিলেন নয়ত ইন্দ্রিয় সুখের মত্ত থাকতেন ৷ যেমন বাবর বালকদের সাথে সমকামীতা পছন্দ করতেন, জাহাঙ্গীর তার হারেম পূর্ণ রাখতে সদা ব্যাস্ত থাকতেন, শাহজাহান মদ্যপান করতেন ও আফিম সেবন করতেন ৷ মুসলিম শাসকদের এ ধরনের নৈতিক আচরন সাধারন হিন্দুদের মনকে প্রভাবিত করতে ব্যার্থ হত ৷ অপরদিকে হিন্দুরা দুবেলা স্নান করে তাদের দেবতাকে আরাধনা করতেন, এটা তাদের প্রতিদিনকার ধর্মীয় দায়িত্ব ৷
No comments:
Post a Comment