Saturday, 5 December 2015

হিন্দুরা কি পুতুল-পুজো করে ? ...... আমার কিছু ভাবনা >>>>

হিন্দুরা কি পুতুল-পুজো করে ? ...... আমার কিছু ভাবনা >>>> .......................................... হিন্দু ধর্মে অজস্র স্তর আছে । প্রতিমা পুজা একটি নিম্নতর স্তর । সাধারণ মানুষের ধারণা মন দ্বারা সীমায়িত , তাই অনন্তের কল্পনা সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব । যার কোনও আকার নেই , তার কোনও সীমা নেই । কোনও ধর্মের মানুষই প্রাথমিক ভাবে সীমাহীন অনন্তের ধারণা করতে পারেনা । মুসলিমরা পশ্চিম দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে কেন ? কারণ পশ্চিম দিকে মক্কা নামক এক সীমায়িত স্থানে তাদের ঈশ্বরের প্রতীক আছে । অনন্তের ভাব অবলম্বন করতে সক্ষম হলে তাদের আর বিশেষ দিকনির্দেশের দরকার পড়তোনা । কারণ অনন্ত যিনি তিনি তো সর্ব দিকে সমভাবে বিরাজমান । খৃস্টানরা ক্রস বুকে ঝুলিয়ে ঘোরে কেন ? ওটাও একটি প্রতীক যাকে তারা পবিত্র ঈশ্বরের সাথে যুক্ত করেছে । হিন্দুরা মানব মনের এই সীমাবদ্ধতার কথা জানে , কিন্তু অন্যদের মতো এটাকে এড়িয়ে যায়না । তাই '' নির্বিকল্প - নিরাকার - সচ্চিদানন্দঘন '' ঈশ্বরীয় সত্তার প্রথম আবিষ্কারক হয়েও হিন্দু ঋষিরা মূর্তি পূজার প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করেননি । কোথায় ছিল এইসব প্রতিমা পুজাবিদ্বেষী সমালোচকদের ধর্ম , যখন আমাদের ঋষিরা এই নির্গুণ নিরাকার ব্রহ্মকে উপলব্ধি করেছেন ? জগতের সমস্ত ঈশ্বরীয় মতবাদই হিন্দুদের কাছ থেকে ধার করা । সুদুর অতীতে সমগ্র জগত যখন অজ্ঞানের আদিম অন্ধকারে ঘুমাচ্ছে তখন ভারতবর্ষের সনাতন ধর্মই আলোকবর্তিকা রূপে মানুষকে এই নিরাকার , অব্যক্ত , সচ্চিদানন্দের দিকে আকৃষ্ট করেছিল । হিন্দু-ধর্মে বিভিন্ন সাকার মূর্তিতে পুজোর প্রচলন থাকলেও হিন্দুরা বহু-ঈশ্বরবাদী নন । বস্তুতঃ তথাকথিত একেশ্বরবাদীদের থেকেও বেশী গভীরে অগ্রসর হয়ে হিন্দুরা আবিষ্কার করেছেন জগতের এক অখণ্ড সত্তার তত্ত্ব , যা আধুনিক বিজ্ঞান-দ্বারাওস্বীকৃত । এই জগৎ এক অখণ্ড সত্তার প্রকাশ । জগতের আপাত বহুত্বের পিছনে রয়েছে এই একত্ব । এই এককেই হিন্দুরা ব্রহ্ম বলেন । এই জগৎ ব্রহ্মেরই আপাত-প্রতীয়মানরূপ । আর দেবতাগণ ? তাঁরা কি বহু নন ? না তাঁরাও এক । ঋগ্বেদে বলা হচ্ছে : ' ইন্দ্রং মিত্রং বরুণমগ্নিমাহুরথো দিব্যঃ সুপর্ণো গরূত্মান্। একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং যমং মাতরিশ্বানমাহুঃ।। (-ঋগ্বেদ. ১।১৬৪।৪৬ ) যাঁঁকে সকলে ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ অগ্নি প্রভৃতি বলে—সেই সত্তা একই; ঋষিরা তাঁকে বহু নামে ডাকে— ‘একং সদ্ বিপ্রা বহুধা বদন্তি’-- সেই এক নিত্য সত্তাই বহুরূপে কথিত হন ।

No comments:

Post a Comment