রবীন্দ্রনাথ দত্তের ভূমিকা
১৯০ বছর ভারতে রাজত্ব করার পর
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানে
অবস্থার চাপে ইংরেজরা যখন এদেশ
ছেড়ে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন
ঝোপ বুঝে কোপ মারার জন্য ভারতে
বসবাসকারী মুসলমানেরা কাফের(ঘৃণিত)
হিন্দুদের সাথে এক থাকলে ইসলাম
বিপন্ন হবে ধুয়া হবে তাদের জন্য
একটা আলাদা মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের
মহড়া হিসাবে ১৯৪৬ সালের ১৬ই
আগষ্ট ঢাকা শহরে যে প্রলয় কান্ড
ঘটিয়েছে তার বিস্তৃত বিবরন আমি
আমার লিখিত বইগুলোতে উল্লেখ
করেছি,ঢাকা শহরে ১৯৪৬ সালের
১৬ই অগাষ্টের নিহত হিন্দুদের
মৃতদেহগুলি সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে ট্রাক
বোঝাই করে আমাদের পাড়ায় পাঠিয়ে
দেয়া হত।তাতে ছিল উলঙ্গ মহিলা এবং
মস্তকহীন শিশুদের মৃতদেহ বাধ্য হয়ে
ট্রাক থেকে হাত পা গুলি নামিয়ে
গনসৎকার করাতাম।
ট্রাকের পাটাতনে ত্রিপল পেতে দেয়া
হত যাতে রাস্তায় ঐরক্ত না পড়ে।
আমাদের পা রক্তে ডুবে যেত।কলকাতা
শহরের হত্যালীলায় প্রথম তিন দিনে
২০,০০০ লোক নিহত হল,এত লাস
গঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়া হয়ে ছিল যে নৌকা
চলাচল দুঃস্বাধ্য হয়ে গিয়েছিল।মানুষের
মাংসে শকুন কুকুরেরও অরুচী ধরেছিল।
এরপর যখন হিন্দু ও শিখরা রুখে দাঁড়াল
তখন মুসলিম লীগ সরকার প্রমাদ
গুনলো।এরপর মুসলীম লীগ বেছে বেছে
বাংলার সবচেয়ে হিন্দু সংখ্যালঘু জেলা
নোয়াখালী তাদের পাকিস্তান
প্রতিষ্ঠার গিনিপিগ হিসাবে ১০ই
অক্টোবর ১৯৪৬ সেখানে হিন্দুনিধন
আরম্ভ হলো।হত্যা লুঠপাঠ
অগ্নিসংযোগ,নারীধর্ষন,বলপূর্বক
বিবাহ,অপহরন,মহিলাদের মাটিতে চিৎ
করে শুইয়ে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে সিঁথির
সিঁদুর মুছে দেয়া,গরু জবাই করা
রক্তদিয়ে মূর্তীগুলিকে স্নানকরানো
এবং তারপর সেগুলিকে টুকরো টুকরো
করে ভেঙ্গে ফেলার মধ্যে দিয়ে
পাকিস্তান আদায়ের জন্য হিন্দুদের
মনে ভীতি সঞ্চার করার প্রয়াস হল।
এই বর্বরোচিত ঘটনা প্রথম দশদিন
লীগ সরকার গোপন রাখতে সক্ষম
হয়েছিল কারন সমস্ত টেলিগ্রাফের তার
কেটে,রাস্তা কেটে নোয়াখালীকে
বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছিল।এরপর অবস্থা
একটুশান্ত হলে নোয়াখালীতে স্বয়ং
সেবকরা যেতে আরম্ভ করলো।গান্ধীজী
এই হত্যালীলা আরম্ভ হওয়ার ২৫দিন
পরে গিয়ে গ্রাম পরিক্রমা আরম্ভ
করলেন,ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে কিছু
স্বেচ্ছা সেবক নোয়াখালী রওনা হলো।
আমিও যাবো বলে মনস্থির করলাম
ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী
জ্ঞানাত্মানন্দের একজন অত্যন্ত
প্রিয়পাত্র এবং মঠের একজন কর্মী
হিসাবে যাত্রার আগের দিন বিকালে
গিয়ে মহারাজের সঙ্গে দেখা করলাম।
তিনি বললেন "তুই যখন যাচ্ছিস দেখত
ঐ প্যাকেটে কিছু বইপত্র এসেছে মনে
হয় নোয়াখালী সমন্ধে খবর
আছে।"তখন মঠের রান্নাঘর থেকে
সবজি কাটার বঁটি এনে প্যাকেটের দড়ি
কেটে এক কোনা থেকে ৭/৮ টা বই নিয়ে
বাড়ি ফিরলাম।রাত্রে বইগুলো চোখ
বোলানোর সময় হয়নি।পরেরদিন ঢাকা
থেকে রওনা হয়ে তারপর পরদিন সকালে
চৌমুহানী স্টেশন থেকে প্রায় ৪মাইল
পশ্চিমে আমাদের গ্রামের বাড়ি
কালিকাপুরে পৌঁছালাম,ইতিমধ্যে অনেক
স্বনামধন্য নেতানেত্রী চৌমুহানীতে
ওখানকার ধনী ব্যবসায়ীদের আতিথ্য
গ্রহন করে তারপর গ্রামগুলির দিকে
রওনা হলেন।আর যারা অত্যন্ত
সাধারন স্বেচ্ছাসেবক প্রানের টানে
সেখানে গিয়েছেন তারাসব আমাদের
বাড়িতে উঠেছে।আমিও তাদের সাথে
উদ্ধার কাজে রওনা হলাম,তাদের
অনেকের নাম আমার আর এখন মনে
নেই তবে শ্রী অমরসরকার,রমেন
চক্রবর্তী,যোগেশচৌধুরীর নাম আমার
বিশেষ করে মনে আছে।তারা কংগ্রেস
সোসালিস্ট পার্টি করতো।গ্রামগুলিতে
গিয়ে দেখি হিন্দুরা সব মুসলমান হয়ে
বসে আছে।পরনে লুঙ্গী,মাথায় সাদা
টুপির ওপর ভারতের মানচিত্র
তারমধ্যে যে অংশগুলি তারা পাকিস্তান
বলে দাবী করছে তা সবুজ রংয়ে
ছাপা,লেখা পাকিস্তান জিন্দাবাদ।
মহিলাদের হাতে শাখা কপালে সিঁদুর
নেই,চোখগুলি জবাফুলের মত লাল।
মন্দিরগুলোর কোন চিহ্ন নেই।আমরা
তাদেরকে বললাম আপনারা চলুন উদ্ধার
করে অন্যত্র নিয়ে যাবো।তারা প্রশ্ন
করলো বাবু আমরা কলমা পড়ে মুসলমান
হয়েছি নামাজ পড়েছি।আমাদের মুখে
গোমাংস দিয়েছে।বাড়ির মেয়েদের
অপহরন করা হয়েছে।হিন্দুরা কি
আমাদের আবার সমাজে নেবে?আমাদের
হাতে কি জল খাবে?আমরা বললাম
আমাদের ধর্মগুরুরা এই নির্দেশ
দিয়েছেন আপনারা বিনা দ্বিধায়
স্বধর্মে ফিরতে পারবেন।তারা
আমাদের মুখের কথা বিশ্বাস করলোনা।
তখন ছাপার অক্ষরের বই পড়তে তারা
বিশ্বাস করলো এবং দলে দলে বাড়ী
ছেড়ে আমাদের সাথে বেরিয়ে এলো।এতে
মুসলমানরা আপত্তি করলোনা।কারন
হিন্দুরা চলে গেলে স্থাবর অস্থাবর
জমিজমা পুকুর তাদের দখলে আসবে।
ইতিমধ্যে এইমধ্যে এই বই এর সংবাদ
দাবানলের মত স্বেচ্ছাসেবকদেরমধ্যে
ছড়িয়ে পড়লো,প্রথম দিনের বইটা তারা
টানাটানি করে ছিঁড়ে যে যা পেরেছে এক
এক পৃষ্ঠা একেক জন নিয়ে গেছে।এই
বইয়ের পৃষ্ঠা দেখিয়ে ধর্মান্তরিত
হিন্দুদের বের করে আনতে আরম্ভ
করলো।এই বইয়ের সংবাদ কোনক্রমে
কংগ্রেস সভাপতি আচার্য কৃপালনীর
স্ত্রী সুচেতা কৃপালনীর নিকটে গেল।
রাত্রে বাড়ি ফিরে এলাম,পরদিন সকালে
৩/৪কপি সঙ্গে নিয়ে গেলাম এবং
সুচেতা কৃপালনীর সাথে দেখা হলো।
বইটায় চোখ বুলিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে
ধরলেন।বললেন তুই করেছিসটা কি
রবি?এরপর তার সাথে আমার
অনেকবার দেখা হয় আমি তাকে পিসিমা
বলে ডাকতাম।আমার এক পিসিমা
ঊষারাণী গুহরায় সুচেতা কৃপালনীর নারী
উদ্ধারের স্বেচ্ছাসেবিকারকাজ
করতেন।ঐসব কাজে আমার অনেক
নেতানেত্রীর সঙ্গে দেখা হয় তার মধ্যে
শ্রীমতী লীলা রায় এর নাম বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য।এখানে উল্লেখযোগ্য যে
নোয়াখালি দাঙ্গার নায়ক গোলাম
সারোয়ার ফতোয়া দিলেন সুচেতা
কৃপালনীকে যে ধর্ষন করতে পারবে
তাকে গাজী উপাধীতে ভূষিত করা হবে
এবং বহুত টাকা ইনাম দেয়া হবে।তাই
নিজের সন্মান রক্ষা কল্পে সবসময়
পটাশিয়াম সাইনাইডের ক্যাপসুল গলায়
ঝুলিয়ে রাখতেন।আমার সহৃদয়
পাঠকপাঠিকারা একবার চিন্তা করুন।
যেখানে কংগ্রেস সভাপতির স্ত্রীর এই
অবস্থা সেখানে সাধারন হিন্দুনারীদের
কি অবস্থা হয়েছিল!পররবর্তীকালে
১৯৫০ সালে ঢাকার তথা সমগ্র
পূর্বপাকিস্তানের হিন্দু নিধনের শিকার
হয়ে একবস্ত্রে যখন কলকাতা এলাম
তারপর পিসিমা
(ঊষারানীগুহরায়)আমাকে বলেন চল
লক্ষ্ণৌ থেকে বেড়িয়ে আসি সুচেতাদির
বাড়িতে উঠব।তোকে দেখলে খুব খুশি
হবে।আমি বললাম তিনি এখন একটা
প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তিনি কি
আমাদের কে পাত্তা দেবেন?পিসিমা
বললেন তুই চলনা।
আমিতো বিনা
ReplyDeleteনোটিশে বারকয়েক তার বাড়ী গিয়ে
থেকে এসেছি।তবে খুবই ব্যস্ত রাত্রে
ছাড়া কথা বলার সময় নাই।তোর
সমন্ধে দু-তিনবার জিজ্ঞাসা করেছেন।
আমার মনে হয় বইটার অপরিসীম
গুরুত্ব অনুভব করে আমার হাত থেকে
পেয়ে তিনি আমাকে মনে রেখেছেন।
১৯৫০সালে ঢাকা থেকে এসে একদিন
বেলুড়মঠে গেলাম স্বামী মাধবানন্দের
সঙ্গে দেখা করতে।৩/৪জন সাধুকে
জিজ্ঞাসা করার পর ঐ যে স্বামীজী
মন্দিরের নিকট পায়চারী করছেন তিনি।
আমি সামনে গিয়ে হাঁটুগেড়ে আমার দুই
হাত তার দুইপায়ে স্থাপন করে আমার
মস্তক তাঁর শ্রীচরনযুগলের উপর রেখে
চোখের জলে পা দুটি সিক্ত করে দিয়ে
২/৩ মিনিট পর উঠে দাঁড়ানোর পর
তিনি দুহাত আমার মাথার উপর স্থাপন
করে দাঁড়িয়ে রইলেন।২/৩ মিনিট আমি
বাকরুদ্ধ হয়ে রইলাম।তারপর বললাম
মহারাজ আমি ঢাকা থেকে এসেছি।স্বামী
জ্ঞানত্মানন্দ,স্বামী
সম্ভুদ্ধানন্দ,স্বামী
ত্যাগীস্বরানন্দ,স্বামীসত্যকামানন্দ
প্রভৃতি মহারাজদের স্নেহধন্য এবং
ঢাকা মিশনের একজন স্বেচ্ছাসেবক।যে
ব্যাপারে আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে
এসেছি সেটা হল নোয়াখালীতে হিন্দু
নিধনের পর "পূর্ববঙ্গ ও হিন্দুসমাজ"
নামে বইটা যদি আপনারা না ছাপাতেন
তবে অধিকাংশ হিন্দুরাই ধর্মে ফিরে
আসতো পারতো না।তাদের মুসলমান
হয়েই ওখানে থেকে যেতে হত।
স্বামীজীর থেকে জানা গেল এই কাজটা
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের
মস্তিষ্কপ্রসূত।কি অক্লান্ত পরিশ্রম
তাঁদের করতে হয়েছে,অতজন ধর্মগুরু
এবং সমাজপতিদের সঙ্গে যোগাযোগ
করে তাদের লিখিত বিবৃতি এনে তা
ছাপিয়ে সময়মত বিতরন করা এখন
আমরা কল্পনাও করতে পারিনা।
এখনকার মত তখন
ফোন,ইন্টারনেট,মোবাইল ইত্যাদি
ছিলনা।আমি আজও অবাক হয়ে পড়ি এই
দুই দেশপ্রেমিক ধর্মপ্রান ব্যক্তির
দূরদৃষ্টি দেখে।আর যেসব অকৃতজ্ঞ
বাঙ্গালী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
সাম্প্রদায়িক বলে গালি না দিয়ে
জলগ্রহন করেননা তাদের মুখে থুতু
ফেলতেও আমার ঘৃণা বোধ হয়।
ভগবানের অশেষ কৃপায় আমি এককপি
সংগ্রহ করে রেখেছি এবং বহু বছর বাদে
আবার তা প্রকাশিত হচ্ছে ভাবী কোন
গবেষকদের কাজে লাগবে বলে।
পাঠ্য
রামকৃষ্ণ মিশনের নিবেদন
নোয়াখালী জেলায় ও ত্রিপুরা জেলার
কতকাংশে ব্যাপকভাবেস্পষ্টতঃ
সম্প্রদায়-বিশেষভুক্ত দলবদ্ধ
সশস্ত্র গুন্ডাগন কর্তৃক অনুষ্ঠিত
নানাবিধদানবীয় অত্যচারের
হৃদয়বিদারক দুঃখকাহিনী সংবাদপত্রে
পাঠ করিয়া আমরা অত্যন্তমর্মাহত
হইয়াছি।বিংশশতাব্দীতে কোনসভ্য
শাসনতন্ত্রের আমলে দীর্ঘদিন ধরিয়া
এইরূপব্যপক
হত্যা,লুন্ঠন,গৃহদাহ,নারীহরন এবং
বলপূর্বক ধর্মান্তকরন ও বিবাহ
অবাধে চলিতেপারে,ইহা একেবারে
কল্পনাতীত।
নির্যাতিতগনকে আমরা বর্তমানে
যতটা সম্ভব সাহায্য প্রেরনকরিতেছি।
আমরা আশা করি যে তাহারা যথাশক্তি
নিজেদের ঘরবাড়ি,বিশেষত
কুলনারীগনেরমর্যাদা রক্ষা করিবেন।
ইহাই তাহাদের শাস্ত্রের আদেশ।
সাধারন লোকের কর্তব্য
মহাপুরুষদেরকর্তব্য হইতে সম্পূর্ণ
পৃথক।নিশ্চেষ্টতাকে যেন সমদর্শিতা
বলে ভুল বোঝা নাহয়।প্রাচীন ভারতের
মহামহিম স্মৃতিকার মনু আত্মরক্ষার
জন্য আততায়ীকে বধ পর্যন্তকরিবার
বিধান দিয়াছেন।আর শ্রীমৎ
স্বামীবিবেকানন্দ মহানির্বানতন্ত্রের
“গৃহীব্যক্তি শত্রুর সামনে শূর ভাব
অবলম্বনকরিবেন”-এই উক্তিটি
উদ্ধৃতিকরিয়া উহার ব্যাখা প্রসঙ্গে
বলিয়াছেন, “শত্রুগনকে বীর্য্যপ্রকাশ
করিয়া শাসন করিতে হইবে।ইহাগৃহস্থের
কর্তব্য।গৃহস্থের পক্ষে ঘরের
এককোনে বসিয়া কাঁদিলে আর
অহিঃসাপরম ধর্মবলিলে চলিবেনা।তিনি
যদি শত্রুগনের নিকট শৌর্য্যপ্রকাশ
না করেন,তাহা হইলে তাহারকর্তব্যের
অবহেলা করা হয়।”(কর্মযোগ,২য়
অধ্যায়)
তাহাদের ইহাও জানা উচিৎ যে কেহ
নিপীড়িত হইয়া ধর্মান্তরগ্রহন করিতে
বাধ্য হইলে তাহার স্বধর্মে ফিরিয়া
আসার পক্ষে কোন বাধা
থাকিতেপারেনা।স্বামী বিবেকানন্দের
নগন্য অনুগামী হিসাবে আমাদের দৃঢ়
ধারনা যে হিন্দুসমাজধর্মের নামে
ছুৎমার্গ,স্বধর্মে প্রত্যাবর্তন
নিরোধ ও আরও নানাবিধ
বাধারূপকূপমন্ডুকত্বের শেষ চিহ্নগুলি
মুছিয়া ফেলিবার জন্য প্রস্তুত
হইয়াছে।ঐগুলি এখন শুধুনিরর্থক
নহে,বরং যে সমাজ একদিন এত বলশালী
ছিল যে গ্রীক,শক,হুন প্রভৃতি
বিজাতীয়গনকেনিজ অঙ্গে মিলাইয়া
লইতে পারিয়াছিল,তাহারজীবনীশক্তি
ক্ষয়করিতেছে।বলাবাহুল্য,বলপূর্বক
অপহৃতা নারীগনকে সসন্মানে সমাজে
ফিরাইয়া আনিতেহইবে।ইহা সম্পূর্ণ
অযৌক্তিক।সমাজ যেন নিজ
অক্ষমতার দোষ নিরীহ উৎপীড়িতগনের
স্কন্ধেনা চাপান।
আমরা নিপীরিতগনকে জোরের সহিত
বলিতেছি,স্বার্থান্ধ
ব্যক্তিগনআপাততঃযতই শক্তিশালী
বলিয়া প্রতীয়নমান হউকনা কেন বিগত
মহাযুদ্ধে ইহাই প্রতিপন্নহইয়াছেযে
মানবজাতির কল্যাণ ভগবানেরই
হস্তে,স্বার্থান্ধ ব্যক্তিগনের
হস্তেনহে।জীবনেরইহা এক অমোঘ
আধ্যাম্তিক নিয়ম যে পাপ
প্রথমাবস্থায় যতই প্রভাব
বিস্তারকরুক না কেন,পরিণামে তাকে
নির্মূল হইতেই হইবে।শ্রীভগবান
নিপীড়িতনকে সাহস ও বল
এবংঅত্যাচারিগনকে বিচারবুদ্ধি ও
মৈত্রীভাবপ্রদানকরুন।
-স্বামী মাধবানন্দ
সাধারন সম্পাদক
রামকৃষ্ণ মিশন
স্বামী বিবেকানন্দের বাণী
“হে ভারত, ভুলিও না—উপাস্য
ReplyDeleteউমানাথ সর্বত্যাগী শঙ্কর; ভুলিও না-
তোমার বিবাহ, তোমার ধন, তোমার
জীবন ইন্দ্রিয়সুখের-নিজের ব্যক্তিগত
সুখের জন্য নহে; ভুলিও না—তুমি
জন্ম হইতেই 'মায়ের' জন্য
বলিপ্রদত্ত; ভুলিও না—তোমার
সমাজ সে বিরাট মহামায়ার
ছায়ামাত্র;ভুলিওনা-নীচজাতি, মূর্খ,
দরিদ্র, অজ্ঞ, মূচি, মেথর তোমার
রক্ত, তোমার ভাই! হে বীর, সাহস
অবলম্বন কর; সদর্পে বল—আমি
ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই।
বল—মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র
ভারতবাসী, ব্রাহ্মণ ভারতবাসী,
চণ্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই;তুমিও
কটিমাত্র বস্ত্রাবৃত হইয়া সদর্পে
ডাকিয়াবল- ভারতবাসী আমার প্রাণ,
ভারতের দেবদেবী আমারঈশ্বর,
ভারতের সমাজ আমারশিশুশয্যা, আমার
যৌবনের উপবন, আমার বার্ধক্যের
বারাণসী; বল ভাই—ভারতের মৃত্তিকা
আমারস্বর্গ, ভারতের কল্যাণ
আমারকল্যাণ; আর বল দিন-রাত, 'হে
গৌরীনাথ, হে জগদম্বে, আমায়
মনুষ্যত্ব দাও; মা, আমার দুর্বলতা
কাপুরুষতা দূরকর, আমায় মানুষ কর।”
“তিনি (শ্রীরামকৃষ্ণ) যে দিন থেকে
জন্মেছেন,সেদিন থেকে সত্যযুগ এসেছে।
এখনসব ভেদাভেদ উঠে
গেল,আচন্ডালপ্রেম পাবে।মেয়েপুরুষ
ভেদ,ধনী-
নির্ধনেরভেদ,পন্ডিতমূর্খভেদ,ব্রাহ্মনচন্ডালভেদ
সব তিনি দূর করে দিয়ে গেলেন।আর
তিনিবিপদভঞ্জন-হিন্দু-মুসলমান
ভেদ,ক্রিশ্চান-হিন্দু ইত্যাদি চলে সব
চলে গেল।”
“প্রেমে
বাঙ্গালবাঙ্গালী,আর্যস্লেচ্ছ,ব্রাহ্মনচন্ডাল,এমনকিনরনারী
পর্যন্ত ভেদ নাই।”
“যে ধর্ম গরীবের দুঃখ দূর
করেনা,মানুষকে দেবতা
করেনা,তাকিআবার ধর্ম?আমাদের কি
আর ধর্ম?আমাদের ‘ছুৎমার্গ’, খালি
‘আমায় ছুঁয়ো না’, ‘আমায় ছুঁয়ো না’।
….আমাদের জাতটা নিজেদের বিশেষত্ব
হারিয়েফেলেছে,সেইজন্য ভারতের এত
দুঃখ কষ্ট।সেই জাতীয় বিশেষত্বের
বিকাশ যাতে হয়,তাই করতেহয়-নীচ
জাতকে তুলতে হবে...খাঁটি হিন্দুদেরই এ
কাজ করতে হবে।”
“ধর্ম কি আর ভারতে আছে দাদা।
জ্ঞানমার্গ,যোগমার্গ সবপলায়ন।এখন
আছেন কেবল খালি ‘আমায় ছুঁয়ো না’,
‘আমায় ছুঁয়ো না’।দুনিয়া অপবিত্র আমি
পবিত্র।সহজ ব্রহ্মজ্ঞান।ভালা মোর
বাপ!!হে ভগবান।
এখনব্রহ্মহৃদয়কন্দরেও নাই,গোলকেও
নাই,সর্বভূতেও নাই,এখন ভাতের
হাঁড়িতে!”
“যারা অপরের নিঃশ্বাসে অপবিত্র হয়ে
যায়,তারা আবার অপরকে কিপবিত্র
করবে?ছুৎমার্গ এক প্রকারমানসিক
ব্যাধি,সাবধান!সর্বপ্রকার বিস্তারই
জীবন,সর্বপ্রকারসঙ্কীর্ণতাই
মৃত্যু।”
“জাতির আদিম অর্থ ছিল- সহর্ষ
ধরিয়া এই অর্থ প্রচলিত-
প্রত্যেকব্যক্তির নিজপ্রকৃতি,নিজ
বিশেষত্ব প্রকাশ করিবার স্বাধীনতা।
এমনকি খুব আধুনিকশাস্ত্রসমূহেও
বিভিন্ন জাতির একত্র ভোজন নিষিদ্ধ
হয় নাই,আর প্রাচীনতম
গ্রন্থসমূহেকোথাও বিভিন্ন জাতিতে
বিবাহ নিষেধ হয়নাই।ভারতের পতন
হইল কখন?যখন এই জাতি বন্ধ করিয়া
দেয়া হইল।আধুনিক জাতিভেদপ্রকৃত
জাতিভেদ নহে,উহা প্রকৃত জাতির
প্রতিবন্ধক সরূপ।”
“আমাদের মাতৃভূমির পক্ষে হিন্দু ও
ইসলাম ধর্মরূপ এই দুইমহান্ মতেরই
সমন্বয়-বৈদান্তিক মস্তিষ্ক এবং
ইসলামীয় দেহ-একমাত্র
আশা।.....আমারমাতৃভূমি যেন ইসলামীয়
দেহ এবং বৈদান্তিক হৃদয়রূপ এই
দ্বিবিধ আদর্শের বিকাশ
করিয়াকল্যানের পথে অগ্রসর হয়েন।”
“রামানুজ যেমন সকলের প্রতি সমভাব
দেখাইয়া ও মুক্তিতে সকলেরইঅধিকার
আছে বলিয়া সর্বসাধারণে ধর্মপ্রচার
করিয়াছিলেন,সেইরূপ....প্রচার করিতে
হবে”
“ভূত ভারতশরীরের রক্তমাংসহীন
কঙ্কালকুল,তোমরাকেনশীঘ্রধূলিতে
পরিনত হয়ে বায়ুতে মিশে যাচ্ছ
না?....এখন অবাধ বিদ্যাচর্চার দিনে
উত্তরাধিকারীদেরদাও,যত শীঘ্র পার
দাও।তোমরা শূন্যে বিলীন হও,আর
নতূন ভারত বেরুক।বেরুক লাঙ্গল
ধরে,চাষারকুটির ভেদ
করে,জেলে,মালা,মুচী,মেথরের ঝুপড়ির
মধ্য হতে।বেরুক মুদীর
দোকানথেকে,ভুনাওয়ালার উনুনের পাশ
থেকে।বেরুক কারখানা থেকে,হাট
থেকে,বাজারথেকে।