শত শত বছর ধরে বৈদিক ধর্মধারার
পথকে বাধাগ্রস্ত করার যেসকল
প্রয়াস নীচপ্রকৃতির পাপবুদ্ধিগন
করে আসছেন তার মধ্যে অন্যতম
হল প্রানীহত্যা দ্বারা প্রানীমাংস
ভক্ষনের নৈতিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠা
তথা
প্রধানত গোহত্যার পাপকার্যে
প্রসারতা আনায়ন।আর এই প্রয়াস
অত্যন্ত সহজ হয়ে পড়ে যখন এই
বিষয়ে অসচেতন বৈদিক
ধর্মালম্বীদের বৈদিক ধর্মধারার
প্রানস্বরুপ পবিত্র বেদে গোমাংস
ভক্ষনের অনুমতি আছে বলে
প্রচার চালানো যায়।আর ঠিক এই
পন্থাটিই বেছে নিয়েছে কূটবুদ্ধি
অধার্মিকের দল আর তাদের সাথে
যোগ দিয়েছে কিছু জ্ঞানহীন
শূন্যমস্তিস্কেরহিন্দু নামধারী
মাংসলোলুপ কলঙ্ক।আর এই
ধরনের অপপ্রচার সাধারন ধর্মপ্রান
হিন্দুদের জন্য একধরনের মারাত্মক
আঘাতের মত ই যার প্রতিকার ই
আমাদের আজকেই এই প্রয়াস।দুইটি
ধাপে আমরা আজ এই অপপ্রচারের
খন্ডন করব।প্রথম ধাপে আমরা
দেখব যে পবিত্র বেদ আসলে
প্রানীহত্যা নিয়ে কি বলে আর
দ্বিতীয় ধাপে অপপ্রচারকারীদের
দ্বারা প্রচারিত কিছু বেদমন্ত্র যাতে
তারা বেদেগোমাংস ভক্ষনের
অনুমতি আছে বলে প্রচার করে
সেগুলো নিয়ে বিশ্লেষন করা
হবে।প্রথমে আমরা দেখব পবিত্র
বেদ প্রানীহত্যা সম্পর্কে কি
বলে-প্রার্পায়াতু শ্রেষ্ঠতমায় কর্মন
আপ্যাযদ্ধম... অঘ্ন্যা যজমানস্য
পশুন্
পাহি।(যজুর্বেদ ১.১)অনুবাদ-হে মনুষ্য
প্রার্থনা কর যাতে সবসময় তুমি মহত্
কার্যে নিজেকে উত্সর্গ করতে
পার,পশুসমূহ অঘ্ন্যা অর্থাত্ হত্যার
অযোগ্য,ওদের রক্ষা কর।"পাষণ্ড
তারা যারা প্রানীমাংস ভোজন করে।
তারা যেন প্রকারান্তরে বিষ ই পান
করে।" -ঋগ্বেদ ১০.৮৭.১৬অনাগো
হত্যা বৈ ভীমা কৃত্যে মা নো গামশ্বং
পুরুষং বধীঃ।(অথর্ববেদ
১০.১.২৯)অনুবাদ-নির্দোষদের হত্যা
করা জঘন্যতম অপরাধ।কখনো
মানুষ,গো-অশ্বাদিদের হত্যা
করোনা।পশুস্ত্রাঁযেথাঙঅর্থাত্
পশুদের রক্ষা কর।(যজুর্বেদ
৬.১১)অর্থাত্ পবিত্র বেদে মূলত
সকল পশুপাখীদের ই হত্যা না
করতে বলা হয়েছে।তাহলে
হিন্দুসমাজে গোহত্যার ব্যপারে
অধিকতর কঠোর দৃষ্টিভঙ্গী
বিদ্যমান কেন?কেননা মানবসভ্যতার
প্রধান দুটি অনুসঙ্গের সাথে জড়িত
হল গরু তথা গাভী ও ষাঁড়।মানবসভ্যত
ার
প্রধান ভিত্তি কৃষিকার্জ যাতে
অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে বৃষ তথা ষাঁড়।
অপরদিকে মানবশিশুর বেঁচে থাকা তথা
বেড়ে ওঠার জন্য মায়ের বুকের
দুধের পর গোদুগ্ধ ই সবচেয়ে
সর্বোত্কৃষ্ট ও প্রধান ভূমিকা
রেখে চলেছে।এ বিষয়ে
নবদ্বীপের কাজী মাওলানা চাঁদ
কাজী সাহেবের উদ্দেশ্যে
শ্রীচৈতন্যদেবেরসেই বিখ্যাত
উক্তিটি স্মরন করা যেতে পারে-
গোদুগ্ধ খাও গাভী তোমার মাতা,
বৃষ অন্ন উপযায়, তাতে তেঁহো
পিতা।।(চৈতন্য চরিতামৃত আদি
লীলা,১৭.১৫৩)অর্থাত্ দেখো
গোদুগ্ধ খেয়ে আমরা বড় হই তাই
তারপ্রতি আমরা মাতৃঋণে আবদ্ধ হই
আর বৃষ কৃষিকাজে সাহায্য করে
আমাদের জন্য অন্ন উত্পাদন করে
তাই তার প্রতি আমরা পিতৃসম ঋণে
আবদ্ধ হই।এরকম যাদের প্রতি আমরা
ঋণী তাদেরকে হত্যা করা কি
অমানুষের কাজ নয়?এছাড়া বৈদিক
ধর্মের মহাপুরুষ যোগেশ্বর
শ্রীকৃষ্ণ বালককালে একজন রাখাল
ছিলেন,বাছুরদের প্রতি তাঁর স্নেহ
ছিল অসীম।এজন্য তাঁর অপর নাম ছিল
গোপাল।এইসব নৈতিক এবং ঐতিহাসিক
কারনেই হিন্দুসমাজে গোহত্যাকে
কঠোর অপরাধ হিসেবেই দেখা
হয়।দ্বিতীয় ধাপে এখন আমরা
অত্যন্ত প্রচলিত কিছু মন্ত্র
দেখবে যেগুলো নাস্তিক বা
বিধর্মীদের দ্বারা বিভিন্ন
ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে দেখা
যায়এই প্রমান করতে যে পবিত্র
বেদে প্রানীমাংস ভক্ষনের কথা
বর্নিত রয়েছে।"ওই শরীরের
মাংসকে আগুনে পোড়ানো
হল,সকল দেবতাদেরকে উত্সর্গ
করা হল,তাদের সকলকে ডাক,এটি খুব
ই সুগন্ধযুক্ত এবং সুস্বাদু,সকলকে
ভাগ করে দাও..."ঋগ্বেদ
১.১৬২.১১-১২পশ্চিমাদের করা এই
অনুবাদ নিয়ে যারা নির্লজ্জের মত
আনন্দ করছেন তাদের প্রতি
জিজ্ঞাসা,একজন বৈদিক পন্ডিতের
অনুবাদ বাদ দিয়েপশ্চিমাদেরঅনুবাদ
দিয়ে এসব অপপ্রচার চালানো কতটা
যুক্তিসংগত?প্রকৃতপক্ষে এখানে
বাজিনং শব্দটির অর্থ ধরা হয়েছে
অশ্ব যার প্রকৃত অর্থ সাহসী/
শক্তিশালী/দ্রুতগামী।মন্ত্রদুটিতে
আসলে জাতির দ্রুত উন্নতির লক্ষে
নিজের দেহ-মনকে
আত্মোত্স্বর্গ করতে বলা
হয়েছে।অনেকে বলে থাকে
অতিথিগ্ব/অতিথিগ্ন অর্থ হল
অতিথিকে
গোমাংস পরিবেশনকারী।প্রকৃতি
পক্ষে গং ধাতুটির অর্থ ই হল যাওয়া
গতিশীল।অর্থাত্ যিনি অতিথির দিকে
যান বা অতিথিকে পরিবেশন করেন।
অনেকে আবার বেদে গোমাংস
নিষিদ্ধতার স্পষ্ট প্রমান দেখে আমতা
আমতা করে বলেন যে গোহত্য
নিষিদ্ধ হলেও বেদে বৃদ্ধ এবং
বন্ধ্যা,অনুপযুক্তগরু হত্যা করতে বলা
হয়েছে যাদেরকে বলা হয়"বশা"।
প্রকৃতপক্ষে বশা অর্থ মোটেও
বন্ধ্যা গাভী নয় বরং এর অর্থ
ঈশ্বরের ক্ষমতা।এর প্রমান হল
অথর্ববেদ ১০.১০.৪ এ বশা বা
ঈশ্বরের ক্ষমতাকে সহস্রধারা বা
অসীম বলা হয়েছে।বশা অর্থ যদি
বন্ধ্যা গাভী ই হত তবে গাভী কি
করে অসীম হয়?অনেকে বলে
থাকেন যজ্ঞে নাকি পশু বলি করা হত।
তারাএমনটাও বলে থাকেন অশ্বমেধ
যজ্ঞে নাকি অশ্ব আর গোমেধ
যজ্ঞে নাকি গরু বলি দেয়া হত!
আগে দেখে নেই'যজ্ঞ'কে
পবিত্র বেদে কি বলা হয়েছে।
পবিত্র বেদের প্রথম মন্ডলের
প্রথম সুক্তের চার নং মন্ত্রে
যজ্ঞকে 'অধ্বরং' বলা হয়েছে।এই
অধ্বরং অর্থ কি?দেখে নেই
সংস্কৃত ব্যকরন কি বলছে। বৈদিক
ব্যকরন গ্রন্থ নিরুক্ত এর ২.৭ এ
বলা
হয়েছে"অধ্বরাং ইতি যজ্ঞনাম।
ধ্বরাতি
হিংসাকর্ম তত্প্রতিশেধহ।।"অনুবাদ-
ধ্বরা
কর্ম হিংসা ও বিদ্বেষযুক্ত,এর
বিপরীত হল অধ্বরা যেমন
যজ্ঞসমূহ।মহর্ষিযস্ক এই
শ্লোকের ব্যখ্যায় বলেছেন
যে যজ্ঞ অধ্বরা অর্থাত্ সম্পূর্ন
সাত্ত্বিক যেখানে সকল প্রকারের
রক্তপাত,হিংসা বিদ্বেষ অনুপস্থিত।
অর্থা
ৎ যজ্ঞে পশুবলীর কোন
প্রশ্নই আসেনা।আর পবিত্র বেদে
যেখানে শত শত মন্ত্রে পশুহত্যা
নিষিদ্ধ করা হয়েছে,পশুদের
উপকারী জীববলে সেবা করতে
বলা হয়েছে সেখানে যজ্ঞে
পশুবলীর চিন্তা আনাটাও অমূলক!
অশ্বমেধ যজ্ঞ কি?"রাষ্টং বৈ অশ্ব
মেধঃ । অগ্ন হি গৌঃ ।অগ্নির্বা অশ্বঃ
আজ্যং মেধঃ ॥ (শতপথ ব্রাহ্মন
১৩.১.৬.৩)অনুবাদ- অশ্ব হল
রাষ্ট্রের
প্রতীকি নাম(সুপ্রশাসকের
প্রগতিশীল রাষ্ট্র অশ্বের ন্যয়
বেগবান এই অর্থে)।
এই রাষ্ট্রের
ReplyDeleteমেধ(প্রগতি) কামনায় যে যজ্ঞ রাজা
করেন তাই অশ্বমেধ যজ্ঞ।
গোমেধ যজ্ঞ কি?গো শব্দের
৯টি অর্থের মধ্যে একটি হল
পৃথিবী।পৃথিবী ও পরিবেশের
নির্মলতা কামনায় যে যজ্ঞ বা
উপাসনা
তাই গোমেধ যজ্ঞ।অশ্ব,গবাদিপশু
ইত্যাদি হত্যা করে ,হোম বা যজ্ঞ
করার বিধান কোন প্রামাণ্য শাস্ত্রে
নেই ।কেবল পৌরাণিক যুগে ভণ্ডের
দল এই সব পাপাচার প্রচার করে
সমাজের মহা সর্বনাশ করেছে। দয়া
,প্রেম,সাম্য ,মানবতা ,অহিংসা মানুষের
পরম ধর্ম। এর বিপরীত আচরন
পশুহত্যা করে ধর্মাচরণ তো হয় না
বরং পাপই হয়।ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি