Wednesday, 9 September 2015

বিধর্মীদের টাইম লাইনে বেদ এবং গীতার ভুল ধরে

আজকাল অনেক নতুন ফেসবুক ব্যবহারকারী বিধর্মীদের টাইম লাইনে দেখছি বেদ এবং গীতার ভুল ধরে (ভগবান মাফ করুন) বিভিন্ন অ-জ্ঞ্যানী হিন্দুদের মাঝে ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। তারা মনে করে বেদ এবং গীতাতে নাকী বৈজ্ঞ্যানিক ভূল রয়েছে। একসময় বিধর্মীরা অপপ্রচার চালাতো, হিন্দু দাদা/দিদিরা মন খারাপ করবেন না।আমি শুধু জানতে চাই ++++++। অর্থাৎ, কপি পেস্ট করে ছড়াতো।কিন্তু সেই কপি পেস্টেরও আমরা সহি- সালামতে জবাব দিয়েছি।তাই এখন, সেটা বাদ দিয়ে আবার নতুন বিভ্রান্তি মুলক পোস্টের অপপ্রচার সৃষ্টি করছে।তারা মনে করে হিন্দুরা বেদ-গীতা পড়ে না, তাই খুব সহজেই ছড়িয়ে পার পাওয়া যাবে।লুল।তাই আবারো সেই পাতি মার্কা ব্যক্তিদের সেই সব অপপ্রচার পোস্ট এর প্রশ্ন সহ বিশ্লেষন করা হল:--- **বেদ বলছে পৃথীবি স্থিরঃ (RigVed 2/12/12) এবার দেখি এখানে কি বলা আছে। [হে মনুষ্যগণ! যিনি ব্যথিত পৃথিবীকে দৃঢ় করেছেন, যিনি প্রকৃপিত পর্বতসমূহকে নিয়মিত করেছেন, যিনি প্রকান্ড অন্তরীক্ষ নির্মাণ করেছেন, যিনি দ্যুলোককে স্তুম্ভিত করেছেন,তিনিই ইন্দ্র।] বিশ্লেষন :এখানে স্থিঢ় কথাটা কোথায় আছে?? আচ্ছা,দৃঢ় আর স্থির কি এক কথা???দৃঢ় এর সমার্থক শব্দটি যদি আমরা বের করি তাহলে এই কথাটার অর্থ দ্বাড়াবে মজবুত। আর স্থির এর সমার্থক শব্দটি যদি আমরা বের করি তাহলে দ্বাড়াবে এক স্থানে দ্বাড়িয়ে থাকা অর্থাৎ জমিয়ে থাকা।ঠিক আছে, এবার এই দুইটা শব্দ ইংরেজিতে কি উল্লেখ আছে সেটা দেখা যাক। ১) দৃঢ় =strong /uncertain /firm অপরপক্ষে ২)স্থির =freeze /unblock। তাহলে বুঝতে পারছেন তো!! ** ঈশ্বর পৃথীবিকে স্থির রেখেছেন(যজুর্বেদ ৩২/৬)। এখন দেখবো এখানে আসলে কি বলা হয়েছে। [“সকল সুখপ্রদায়ক ঈশ্বরকে আমরা যেন ভালবাসা ও ভক্তির সাথে হৃদয়স্থিত করতে পারি, যিনি এই সুন্দর পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহসমূহ সমস্ত কিছুকে করেছেন ভারসাম্যময়, যিনি আমাদের অন্তিম লক্ষ, মোক্ষের স্থান] বিশ্লেষন ;-এখানে সেই আবারো একই কথা বলবো, স্থির কথাটা কোথায় বলা আছে??এখানে স্পটভাবেই বলা আছে ভারসাম্যর কথা।তাহলে উল্টো প্রশ্ন,ভারসাম্যআর স্থির কি এক??ভারসাম্য শব্দটি ইংরেজীতে দ্বাড়ায় Balance. মুমিনরা এখানেও পড়াজিত হল মনে হচ্ছে!! **সূর্য ঘোড়ার গাড়ির উপর রয়েছে ও এই ঘোড়ার গাড়িটি ৭টি ঘোড়া চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং পৃথিবীর চারদিকে ঘুড়ছে। (RigVed 1/50/1)। এখন দেখবো আসলে কি বলা হয়েছে। [ সূর্য দীপ্তিমান ও সকল প্রাণীদের জানেন, তার অশ্বগণ তাকে সমস্ত জগতের দর্শনের জন্য ঊর্ধ্বে বহন করেছে] বিশ্লেষন :-এখানে অশ্বসমূহকে বৈদিক ঋষিগন সর্বদাই সূর্য কিরনের সাথে তুলনা করেছে।এরকম ঋগ্বেদের বিভিন্ন যায়গাতে উল্লেখ আছে।এটি একটি বৈদিক উপম মাত্র। সূর্যের আলোক আকাশে ধাবমান হয়, উষার আলোক আকাশে ধাবমান হয়, সে জন্য সে আলোক বা রশ্মি সমূহকে ঋগ্বেদে সর্বদাই অশ্বি বলে বর্ণনা করা হয়েছে, এবং সূর্য ও ঊষাকে অশ্বযুক্ত বলে সম্বোধন করা হয়েছে। অশ্বিন শব্দেরও সেই অর্থ, অশ্বযুক্ত অর্থাৎ আলোকযুক্ত। ** ব্রম্মা তাঁর কন্যাকে বিয়ে করেছেন(Rig ved 3:31:1) এখন দেখবো এখানে কি উল্লেখ করা হয়েছে। [পুত্রহীন পিতা সমর্থ জামাতাকে সম্মানিত করে শাস্ত্রানুশাসনক্রমে দুহিতা জাত পৌত্র প্রাপ্ত হন। অপুত্ত পিতা দুহিতার গর্ভ হতে বিশ্বাস করে প্রসন্নমনে শরীর ধারণ করেন ] বিশ্লেষন :-পূর্বকালে পুত্র না হলে কন্যার বিবাহ দিবার সময় জামাতার সাথে এরূপ বন্দোবস্ত করা হত যে, ঐ কন্যার যদি পুত্র হয় তাহলে কন্যার পিতার কাছে থেকে বড় হবে এবং পুত্রটি দৌহিত্র হয়েও পিতার ন্যায় পৌত্রের কার্য করবে। এখল লক্ষ্য করুন,এখানে ব্রম্মা আসলো কোথা থেকে??? **বাতাস ছাড়া কি প্রদীপ জ্বলতে পারে? (Bhagvad Gita: 6:19) অর্থঃ বায়ু বিহীন জায়গায় প্রদীপের আলো কাঁপে না। >> বাতাস না থাকলে তো আলোই জ্বলার কথা না, কাঁপা তো দূরের কথা। এখন দেখবো আসলে এই শ্লোকে কি বলা হয়েছে। [যথা দীপো নিবাতস্থো নেঙ্গতে সোপমা স্মৃতা ৷ যোগিনো যতচিত্তস্য যুঞ্জতো যোগমাত্মনঃ ॥ অনুবাদ- বায়ুশূন্য স্থানে দীপশিখা যেমন কম্পিত হয় না, চিত্তবৃত্তির নিরোধ অভ্যাসকারী যোগীর চিত্তও তেমনইভাবে অবিচলিত থাকে।] বিশ্লেষন :-যে প্রকার বায়ুশূন্য অবস্থিত প্রদিপের দিপ শিখা যেমন কম্পিত হয় না,শিখা উর্ধ্বমুখি হয় না,তাতে কম্পন হয় না,সেই উপমা দেয়া হয়েছে পরমাত্মার ধ্যানে প্রবৃত্ত চিত্তযোয়ী যোগির সঙ্গে।প্রদিপ তাঁর উদাহরণ মাত্র।বর্তমান সময়ে প্রদিপের প্রচলন কমে গেছে।বায়ুতে বেগ না থাকলে,ধুপ কাঠির ধোয়া সোজা উপরের দিকে উঠে যায়।এটা যোগির বিজিত চিত্তের উদাহরণ মাত্র।অর্থাৎ সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে,যেখানে বায়ু থাকে না সেখানে প্রদিপ শিখা কম্পিত হয় না। তাহলে ভূল টা কোথায়??? **ভগবানের এক চোখ অন্ধ(গীতা ১১/১৯)। আগে শ্লোকটাতে কি আছে সেটা একবার দেখা যাক। [অনাদিমধ্যান্তমনন্তবীর্যম্ অনন্তবাহুং শশিসূর্যনেত্রম্। পশ্যামি ত্বাং দীপ্তহুতাশবক্ত্রং স্বতেজসা বিশ্বমিদং তপন্তম্ ॥ অনুবাদ:- আমি দেখছি তোমার আদি, মধ্য ও অন্ত নেই৷ তুমি অনন্ত বীর্যশালী ও অসংখ্য বাহুবিশিষ্ট এবং চন্দ্র ও সূর্য তোমার চক্ষুদ্বয়৷ তোমার মুখমণ্ডলে প্রদীপ্ত অগ্নির জ্যোতি এবং তুমি স্বীয় তেজে সমস্ত জগৎ সন্তপ্ত করছ।] বিশ্লেষন :এই যে পরমেশ্বর এর যে রুপ বর্ননা করা হচ্ছে তা কিন্তু ভগবান নিজে বলেন নি,বলেছে অর্জুন। তাহলে কি অর্জুন ভগবানের এক চোখ অন্ধ দেখেছেন??? না!!!! সূর্যের মত প্রকাশ এবং চন্দ্রের মত শীতলতা প্রদান করার গুন একমাত্র ভগবানের রয়েছে।এখানে শশি এবং সূর্য প্রতীক মাত্র।অর্থাৎ, চন্দ্র ও সূর্যের দৃষ্টি যুক্ত।তাই এই কথাটা বুঝতে বিধর্মীদের অসুবিধা হয়। এখন বিধর্মীদের যদি পাল্টা প্রশ্ন করে যদি বলি আপনার আল্লাহ স্বয়ং এর চেয়েও বড় ভূল কথা বলেছে কোরানে তাহলে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে??? বুঝতে পারছেন নাতো??দেখুন,আল্লাহ কেমনে বললো যে আকাশকে করেছি ছাদ আর ভুমিকে করেছি বিছানা!!। বললে তো বলবেন এটা আল্লাহ উপমা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ যদি এত বড় ভূল উপমা হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন তাহলে মুনি-ঋষিরা কিংবা অর্জুন ভূল না করেও উপমা হিসেবে যদি ব্যবহার করে তাহলে আপনাদের অসুবিধাটা কোথায়???

1 comment:

  1. পরিশেষে বলতে চাই,আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা
    চাইলে এরকম হাজার হাজার ভূল কোরান থেকে বের
    করতে পারি।কিন্তু করবো না।কারন,আমরা বিশ্বাস
    করি একমাত্র সনাতন ধর্ম ছাড়া বাকি সব
    মিথ্যা।শুধু তাদের সাথে তর্ক করা বোকামি ছাড়া
    আর কিছুই না।তবে আরেক্টু বলা দরকার,আমরা
    সবাই জানি যে কোরান অনুযায়ী নাকি ভবিষ্যতে
    আপনারা ৭৩ টা ভাগে ভাগ হবেন।আর এদের মধ্যে
    এক্টা ভাগ শুধু পৃথীবিতে অবস্থান করবে।আপনারা
    কি জানেন,এই এক ভাগের অবস্থান কি হবে???
    বলছি,তারা আবার সনাতন ধর্ম গ্রহন করে সত্যের
    ধর্মে ফিরে আসবে।তাই এখনো সময় আছে ফিরে
    আসুন সত্য পথে এবং ভগবান শ্রী কৃষ্ণের কাছে
    নিজেকে সমর্পিত করুন।আপনাদের সকল পাপ
    তিনি ক্ষমা করে দেবেন।ধন্যবাদ।
    **** জয় শ্রী কৃষ্ণ ****

    ReplyDelete