Wednesday, 29 July 2015

সাকা চৌধুরী

১৯৪৯ সালের ১৩ মার্চ চট্টগ্রামে একজন মানুষের(!) জন্ম হয়েছিল। আমি জানি না তার মনুষ্যত্বকাল কতদিনের ছিল। কিন্তু তার পশুত্ব কাল ১৯৭১-২০১৫। আমি মনেপ্রাণে চেয়েছিলাম এটা ২০১৫-তে এসেই থেমে যাক। একটা জানোয়ার যে কতটা নির্মম, কতটা বর্বর হতে পারে তার উজ্বল উদাহরণ সাকা চৌধুরী। তার কুকর্মের তালিকা হয়তো গুনেও শেষ করা যাবে না। সময় একাত্তরের ১৩ ই এপ্রিল;- চট্টগ্রামের রাউজানের উনসত্তর পাড়ায় শান্তি মিটিংয়ের কথা বলে এলাকার হিন্দু নর নারীদের একত্রিত করা হয় সাকা চৌধুরীর প্ররোচনায়। অতঃপর সাকা চৌধুরীর প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে পাকিস্তানী সেনারা নিরীহ, নিরস্ত্র হিন্দু নর-নারীদের ওপর ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। আপনি ভাবুন একজন মা যিনি হয়তো ছেলেকে ভাত বেড়ে দিয়ে বলে এসেছিলেন,'বাবা,খাওয়া শেষ করে পড়তে বসবে। আমি এখুনি আসছি। আমি না আসা পর্যন্ত ঘর থেকে বের হবে না।' ছেলেটি হয়তো সারাদিন বসে ছিল। মা আসলেই বের হবে..... একজন নতুন বিয়ে করা স্বামী হয়তো তার সহধর্মিণীকে শেষ বারের মত বলে এসেছিলেন খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। আমি না আসা পর্যন্ত দরজায় কেউ কড়া নাড়লেও খুলবে না। সদ্য বিয়ে হওয়া নতুন বউটি অপেক্ষা করছিল সেই কড়া নাড়ার শব্দ শোনার। তাঁরা কেউ ফিরে আসেন নি। ব্রাশ ফায়ারে একের পর এক লুটিয়ে পড়েছিলেন। বুলেটের আওয়াজ আর তাদের মৃত্যুর চিৎকারে মিলেমিশে ঐ গ্রামের কেমন অবস্থা হতে পারে আমাদের চিন্তা শক্তি আমাদের অতটুকু ভাবার মত ক্ষমতা দিয়েছে বলে মনে হয় না। ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল;- চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানাধীন শাকপুরা গ্রামে কিছু লুকিয়ে থাকা মানুষকে খুঁজে বের করে নির্বিচারে গুলি করে তারপর বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। মানুষগুলো বুঝতে পারছিল মৃত্যু আসন্ন। তারপরও বাঁচতে চেয়েছিল। লুকিয়ে ছিল পাশেরই কোন জঙ্গলে আর ধান ক্ষেতে। হঠাৎ হয়তো মারা পড়ল একের পর এক। হয়তো গুলি লাগার পরও বেঁচেছিলেন কেউ কেউ। এত তীব্র যন্ত্রণার মধ্যেও তাঁদেরকে বেয়নেট দিয়ে খোঁচানো হল। তাঁদের মৃত্যু নিশ্চিত করা হলো। এরপরেও অসংখ্য মেয়েদের সম্ভ্রমহানি, ভোগ্যপণ্য হিসেবে পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়ে এই জানোয়ার যে নির্মম পাশবিকতার তৃপ্তি নিত তা প্রকাশের জন্য কোন ভাষাই যথেষ্ট নয়। এত মানুষ হত্যার পরেও, এত কুকর্মের পরেও একটা জন্তু ঠিকই বেঁচে ছিল। খুব আরাম আয়েশেই বেঁচে ছিল। একটা বড় রাজনৈতিক দলের একজন ভালো পদে বহাল তবিয়তে ছিল। আমাদের দেশের মানুষ যে কেমন নির্লজ্জ সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের দেশেরই মানুষের ভোট তাকে নির্বাচিত করেছে এম.পি হিসেবে। একটা পশুর কাছে আমাদের দেশের মানুষ বিক্রি হয়ে যায়। তাদের মনুষ্যত্ব বিক্রি হয়ে যায়। মানুষের ঘরে অনেক সময় ভুল করে পশুর জন্ম হয় কিন্তু পশুর ঘরে পশুর ছাড়া আর কিছুরই জন্ম হয় না এটারই বড় প্রমান জানোয়ারটির জন্মদাতা রাজাকার ফজলুল কাদের। এই রাজাকারের নামে রয়েছে চট্টগ্রাম শহরের একটি সড়কের নাম। একজন মুক্তিযোদ্ধা হেরে যান প্রতিটি মুহূর্তে যখন ঐ সড়কটি উপর দিয়ে তাঁদের পথ চলতে হয়। একজন বীরের মৃত্যু হয় প্রতিটি মুহূর্তে যখন একটা খুনি রাজাকারের উপর একটা দেশের ভার দিয়ে দেওয়া হয়। একজন বীরশ্রেষ্ঠের মায়ের কান্না গলায় এসে ধরে যায় যখন দেখতে পান একটা দেশের জন্মকে গর্ভে থাকতেই যেই জন্তুটি গলা টিপে ধরেছিল সে এখন পতাকাবাহী গাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। আজকে সেই জন্তুটির রায় হল। যেসব মানবতাবাদী বলছেন ফাঁসির রায় দেওয়াটা অনুচিত হয়েছে তাঁদেরকে বলব দয়া করে পানির নিচে কিছুক্ষণ শ্বাস বন্ধ করে বসে থাকুন। একটা জন্তুর জন্য মানবতা আপনাদের নিঃশ্বাস বন্ধের সাথে সাথে উপচিয়ে পরুক। কান্নার পরে যে দীর্ঘশ্বাসটা ফেলে কিছুটা শান্তি পাওয়া যায় আমি সেই দীর্ঘশ্বাসটির শব্দ শুনতে পাচ্ছি যারা অপেক্ষা করেছিলেন এই জানোয়ারের বিচার হবে, এই জন্তুটির কোন একদিন ফাঁসির রায় হবে।

No comments:

Post a Comment