Thursday, 30 July 2015

পীর আর মাঝার ব্যবসা বাংলাদেশের অনেক পুরনো এবং প্রতিষ্ঠিত একটা ব্যবসা

Juliyas Caesar পীর আর মাঝার ব্যবসা বাংলাদেশের অনেক পুরনো এবং প্রতিষ্ঠিত একটা ব্যবসা। বাঙালি মুরিদ হতে পছন্দ করে। খুব সহজেই তারা কারও না কারও মুরিদ হয়ে যায়। নিজের কোন মতামত জোর গলায় বলবে সেই ক্ষমতা তাদের কমই হয়। মুরিদ বা অন্ধ ভক্ত হুওয়ার এই দোষটা বাঙালির রক্তেই মিশে আছে। জেনেটিক্যাল ব্যাপার মনে হয়। তাই নাস্তিক হওয়ার পরেও বাঙালি মুরিদ থাকে কারও না কারও। বাঙালির এই মুরিদ হওয়ার স্বভাবের কারণেই আহমদ ছফা, হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ সবাই এখন এক একজন পীর। আর নাস্তিকরাও(সবাইনয়) কেউ আজাদ পীরের মাঝারের খাদেম। কেউ বা আবার ছফা পীরের মুরিদ। ওহ হ্যাঁ, জ্যান্ত পীর তসলিমা নাসরিনও আছেন। তসলিমার মুরিদও আছে। তসলিমা নাসরিন যা বলবেন তাই ঐশী বাণী! যেমন;- তিনি যদি বলেন রুবেল হ্যাপিকে ধর্ষণ করেছেন তাহলে সেটা ধর্ষণই হবে। তসলিমার মুরিদেরাও সেটাকে ধর্ষণ বলে চিল্লানো শুরু করবেন। আদতে ধর্ষণের মতো কিছু হয় নি। একসময় তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল সেই সুবাধে শারীরিক সম্পর্কও হয়েছে। পরে সম্পর্ক ভেঙে গেছে তখন হ্যাপি ধর্ষণের অভিযোগ আনল। এটা হলে ডিভোর্সের পর প্রত্যেক মেয়েই এক্স-হাজব্যান্ডকে ধর্ষক বলতে পারেন। তসলিমা কিছুদিন আগে একটা অত্যন্ত অমানবিক লেখাও লিখেছেন;- 'অভিজিতের কথা বলতে গিয়ে বড় মঞ্চে বন্যা হাসে কেন? কান্না কোথায়? বেদনা কোথায়?' -- আশা করি এটাকে সমর্থনেরও মানুষের অভাব হবে না। কিন্তু পীর এবং পীরের মুরিদদের এটা জানা থাকা উচিত যে প্রত্যেক মানুষের আলাদা ব্যক্তিসত্তা থাকে। সবার আলাদা মানসিক দৃঢ়তা থাকে। আর সবার আবেগ এবং কষ্ট প্রকাশের ধরণ একই হয় না। তসলিমার মতন একজন গুণী লেখিকার থেকে গঠনমূলক সমালোচনা আশা করা যায়। আর এইসব অপাঠ্য লেখা নিয়েও উনার মুরিদদের লাফালাফি দেখলে চরম সার্কাস মনে হয়। এখন দল ভাগ করলে আপনি এভাবে বলতে পারেন ছফা দল, আজাদ লীগ, তসলিমা শিবির! এই তিন দলের অনুসারীদের মধ্যে ভালোই লেগেছে। অতীতে আহমদ ছফা হুমায়ুন আজাদের সমালোচনা করেছেন। হুমায়ুন আজাদ আহমদ ছফার সমালোচনা করেছেন। তসলিমা হুমায়ুন আজাদের সমালোচনা করেছেন। হুমায়ুন আজাদ তসলিমার সমালোচনা করেছেন। এমন আরও অনেক আছে লেখক লেখিকাদের মধ্যে মতবিরোধের উদাহরণ। একে অন্যজনকে সহ্য করতে না পারার উদাহরণও অনেক। নিজের 'গাভী বিত্তান্ত' উপন্যাসে আহমদ ছফা ডক্টর আহমদ শরীফকে ইঙ্গিত করেই একটি চরিত্র রেখেছিলেন ডক্টর আহমদ ত্বকি নাম দিয়ে। দেশের সীমানা পেরিয়ে অন্য দেশের যাওয়ারও উদাহরণ আছে। তসলিমা নাসরিন পশ্চিমবঙ্গের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সমালোচনা করে লিখেছেন;- "সুনীল বড় লেখক ছিলেন, মানুষ হিসেবে নয়।" এসব তাঁদের মধ্যকার মতবিরোধ। কখনও কখনও বাঙালির একে অন্যকে সহ্য করতে না পারার যে মজ্জাগত স্বভাব সেই পরশ্রীকাতরতার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু আমি জানি না এখনকার নাস্তিকেরা(!) কেন ধার্মিকদের মতো আহমদ ছফা কিংবা হুমায়ুন আজাদ অথবা তসলিমার অন্ধ ভক্ত হবেন? কেন কাঁদা ছোড়াছুড়ি করবেন? একমাত্র হুমায়ুন আজাদ যেটা বলেছেন সেটাই সত্য! আহমদ ছফা যেটা বলেছেন সেটাই সত্য! এটা কেমন মানসিকতা? নিজেকে মুক্তমনা, প্রগতিশীল দাবী করা মানুষেরা কিভাবে এমন অন্ধভাবে অনুসরণ করেন একজন লেখককে? মুরিদ হয়ে যাওয়া বাঙালির রক্তে মিশে আছে বলেই হয়তো। তাঁদের প্রত্যেকেরই সৃজনশীলতা আছে। অসাধারণ অনেক সৃষ্টি আছে। আর বড় ব্যাপার হচ্ছে সবাই যেহেতু রক্ত মাংসের মানুষ ছিলেন তাই দোষগুণও ছিল উনাদের। আপনাকে কেন অন্ধের মত অনুসরণ করতে হবে? অন্ধ বিশ্বাস, গোঁড়ামি, অনুকরণের বিরুদ্ধে লিখে গেছেন তাঁরা। সৌভাগ্যের(!) ব্যাপার হচ্ছে আহমদ ছফা এবং হুমায়ুন আজাদ প্রয়াত হয়েছেন। তাঁদেরকে এই মুরিদবাহিনী দেখে যেতে হয়নি। তবে জ্যান্ত পীর তসলিমা নাসরিন এখনও বেঁচে আছেন। নিজের এত আন্ধা মুরিদবাহিনী দেখে তিনি নিশ্চয় খুশি হবেন না আশা করি। অন্তত তসলিমার লেখা এইসব অন্ধ অনুকরণকে প্রশ্রয় দেয় বলে কখনও মনে হয়নি। ধর্ম নাই, আমি ধর্মে বিশ্বাসী না এই দর্শনকেও জ্ঞানীরা ধর্ম বানিয়ে নিয়েছেন। নিজেরাও ধর্মান্ধদের মতো অন্ধ অনুসারী হয়েছেন। পুনশ্চঃ আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের এইসব সমালোচনায় যদিও কিছুই যায় আসে না তাও মাঝেমাঝে কিছু সার্কাস নিতান্তই হজম হয় না তাই লিখে ফেললাম।

No comments:

Post a Comment