Tapan Ghosh :- কিছু বামপন্থী মাকুরা দেখছি আমার পোস্ট-এর বিরুদ্ধে নোংরা পোস্ট দিচ্ছে। কারণটা সহজ। এদের আঁতে ঘা লেগেছে। কিন্তু আমার প্রতিটি কথা সত্য। আমি মাকু-সেকু দেরকে চ্যালেঞ্জ করছি - আমার দেওয়া একটা তথ্যও কেউ ভুল প্রমান করুক। প্রমান করুক - ইন্দিরা গান্ধী জরুরী অবস্থার সময় কোন সিপিএম নেতাকে জেলে পুরেছেন। একজন ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি তত্কালীন ডায়মন্ড হারবারের সিপিএম এম পি - জ্যোতির্ময় বসু। তিনি পার্টির নির্দেশ না মেনে জরুরী অবস্থার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন। আর সবাই পার্টির বাধ্য ছেলে। কেউ সেই জরুরী অবস্থার বিরোধিতা করেন নি। কেউ ইন্দিরা গান্ধীকে স্বৈরতান্ত্রিক বলেন নি। সিপিএম গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইতে যোগ দেয় নি। তারা জয়প্রকাশ নারায়নের আন্দোলনেও যোগ দেয় নি, নিজেরাও কোন আন্দোলন করে নি। তাই ইন্দিরা সেদিন সিপিএম-কে বিপজ্জনক বলে মনে করেন নি। সুতরাং সিপিএম নেতাদের গ্রেপ্তারও করেন নি।
কয়েকজন বামপন্থী যুক্তি দিয়েছে - সিপিএম জরুরী অবস্থাকে সমর্থন করলে তারপর জনগণ ১৯৭৭ সালে আবার ওই পার্টিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনল কেন ? প্রশ্নটা সঠিক। উত্তরটাও জানা দরকার।
১৯৭৭ সালে জানুয়ারী মাসে ইন্দিরা গান্ধী লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা করলে সিপিএম গর্ত থেকে বেরিয়ে এল। আদি কংগ্রেস নেতা প্রফুল্ল সেনের হাত ধরে নির্বাচনী প্রচারে নামল। জনতা পার্টি-র সঙ্গে পূর্ণ নির্বাচনী আঁতাত করল। তখন আমি আর এস এসের নবীন প্রচারক। সেই ঐতিহাসিক লোকসভা নির্বাচনে আর এস এসের নির্দেশে আমি তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে জনতা পার্টির প্রার্থী সুশীল ধাড়া-র হয়ে পাঁশকুড়া পূর্ব (কোলাঘাট) বিধানসভা কেন্দ্রের পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে প্রচারের কাজ করেছি।
জরুরী অবস্থার জন্য জনগন ছিল ক্ষিপ্ত। মার্চ মাসে নির্বাচনে কংগ্রেস হারল। এমনকি অকল্পনীয় ভাবে ইন্দিরা গান্ধী ও তাঁর যুবরাজ পুত্র সঞ্জয় গান্ধীও হেরে গেলেন। ইন্দিরা হেরে যাওয়ার পর চরম দক্ষিনপন্থী নেতা মোরারজী দেশাই-এর নেতৃত্বে কেন্দ্রে জনতা সরকার গঠিত হল। মোরারজী বিভিন্ন রাজ্যের কংগ্রেসী সরকারগুলো ভেঙ্গে দিলেন। পশ্চিমবঙ্গেও। জুন মাসে এখানে বিধানসভা নির্বাচন হল। লোকসভা নির্বাচনের আঁতাত বিধানসভা নির্বাচনে থাকল না। জনতা দলের প্রফুল্ল সেন সিপিএম-কে তাদের দাবিমত আসন দিতে রাজী হলেন না। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গে ত্রিমুখী লড়াই হল। কংগ্রেস, জনতা ও বামফ্রন্ট। জনতা পার্টি ছিল অগোছাল ও চরম বিশৃঙ্খল। কংগ্রেস পর্যুদস্ত। সিপিএম গোছানো অবস্থায়। তাই সেই নির্বাচনে সিপিএম জিতল।
এর জন্য সিপিএমের সাংগঠনিক দক্ষতার প্রশংসা করতেই হবে। বিশেষ করে সেই সময়ের অসম্ভব সংগঠন দক্ষ প্রমোদ দাশগুপ্ত-এর অবদান বিরাট। কিন্তু এটাও স্বীকার করতে হবে যে, ১৯৭২ সালে সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের মার খেয়ে কাপুরুষের মত গর্তে ঢুকে গিয়েছিল। তারপর রাশিয়ার মাধ্যমে ইন্দিরার কাছে নতিস্বীকার করে গুপ্ত আঁতাত করে নিজেদের চামড়া বাঁচিয়েছিল। তারপর সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ১৯৭৭ সালে নির্বাচনের আসরে। শেষ জয় - ১৯৭৭ সালের জুন মাসে বিধানসভা নির্বাচনে এই বামেদেরই হয়েছিল। তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা, ঝড়ের সামনে মাথা নীচু করার বাস্তব বুদ্ধি এবং মেরুদন্ডের নমনীয়তার জন্যই এটা সম্ভব হয়েছিল।
পরের ইতিহাসটাও জানা দরকার। চরম দক্ষিনপন্থী মোরারজী দেশাই-এর সরকারের জন্য চরমভাবে বিঘ্নিত হল সোভিয়েত রাশিয়ার স্বার্থ। নেহেরু নিজেও ছিলেন বর্ণচোরা বামপন্থী, মাকু। তার উপর, নেতাজিকে গুপ্ত হত্যা করে রাশিয়া নেহেরুর গদিকে নিষ্কন্টক করে দিয়েছিল। আর তার বিনিময়ে কিনে নিয়েছিল নেহেরু ও নেহেরু পরিবারকে। তাই তো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় পাক্কা কমুনিষ্ট কৃষ্ণমেনন, নুরুল হাসান কে স্থান দিয়েছিলেন নেহেরু। আর মার্কসবাদী অর্থনীতি অনুসরণ করে ছিবড়ে হয়ে যাওয়া রাশিয়া নেহেরুকে ব্ল্যাকমেল করে (নেতাজী হত্যার কথা বলে দেব, আজাদ হিন্দ ফৌজের গুপ্ত ধনভান্ডারের কথা বলে দেব ) ভারতকে প্রচন্ড ভাবে আর্থিক শোষণ করে চলেছিল। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে রুবলের মূল্য পঞ্চাশ পয়সায় দাঁড়িয়েছে, তখন রাশিয়া ভারতের কাছে বিনিময় মূল্য নিত ১ রুবলের জন্য ৩০ টাকা। রাশিয়ার তখনকার অবস্থা জানতে হলে বিখ্যাত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী-র লেখা "দ্বন্দ-মধুর" বইটা পরে দেখুন।
১৯৭৭ সালে কংগ্রেস ও নেহেরু পরিবার ক্ষমতা থেকে চলে গেলে রাশিয়ার স্বার্থ চরমভাবে বিঘ্নিত হল। তাই রাশিয়া তার খেলা শুরু করে দিল। সাংবাদিকদের মধ্যে বামপন্থীদের প্রভাব ছিলই। তারা প্রচার শুরু করে দিল - জনতা পার্টি মানেই জনসংঘ, আর জনসংঘ মানেই আর এস এস। ফ্যাসিবাদী আর এস এস ভারতটাকে দখল করে নিল। এই ফ্যাসিবাদকে রুখতে হবে। তখন পাঁচমিশেলি জনতা দলে যেসব রাশিয়ার অর্থপুষ্ট সোশালিস্ট নেতারা ছিলেন তাদেরকে দিয়ে মাত্র আড়াই বছরের মধ্যেই জনতা সরকারকে ভেঙ্গে দিল রাশিয়া। ৬ নম্বরী সোশালিস্ট নেতা পিলু মোদী রাশিয়া থেকে ঘুরে এসেই বায়না ধরলেন - জনসংঘের সব সদস্যকে আর এস এস থেকে পদত্যাগ করতে হবে। দ্বৈত সদস্যপদ চলবে না। বাজপেয়ী - আদবানী ইত্যাদি নেতারা মানলেন না। সেই অজুহাতে জনতা পার্টি ভেঙ্গে দেওয়া হল। আর এস এস কে রোখার অজুহাতে আবার রাশিয়ার তাঁবেদার নেহেরু পরিবারকে দিল্লীর ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা হল।
এই হল কাহিনী। এর মধ্যে অনেক উপ-কাহিনী আছে। সেগুলো বলতে হলে রাতের ঘুমকে বাদ দিতে হবে। আজকের সিপিএমের অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত ক্যাডার -সমর্থকরা এসব ইতিহাস জানে না। তাদেরকে মূর্খ করে রাখাই সিপিএমের কৌশল। মূর্খ ক্যাডার-সমর্থক-ই সিপিএমের সম্পদ। সিপিএমের রাজত্ব মানে অজ্ঞতার প্রসার, অন্ধকারের বিস্তার। ৩৪ বছরের সেই অন্ধকার থেকে পশ্চিমবঙ্গ এখনো মুক্তি পায়নি। সেই অন্ধকারেরই ফসল বর্তমানের মমতা ব্যানার্জী।
No comments:
Post a Comment