"বজরঙ্গী ভাইজান" নেপথ্যে কি?
সিনেমার প্রতি আগ্রহ আমার নেই বললেই চলে। বাংলা কিংবা হিন্দি বাণিজ্যিক সিনেমাগুলোর একঘেয়েমি কাহিনী দেখতে দেখতে রুচি নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও প্রচারের ফাঁদে পড়ে কিছু সিনেমা দেখতে হয় কৌতুহল মেটাতে। যেমন দেখেছিলাম আমীর খান অভিনীত পিকে; সম্প্রতি দেখলাম সালমানের বজরঙ্গী ভাইজান। ফেসবুকে আমার 'হিন্দুত্ববাদী'বন্ধুদের নিকট থেকে জেনেছিলাম, বজরঙ্গী ভাইজানে হিন্দুত্ববাদীদের নাকি পজিটিভ ভাবে দেখানো হয়েছে! আজ পর্যন্ত যতগুলো বলিউড সিনেমা দেখেছি তার একটিতেও দেখিনি হিন্দু ধর্মগুরুদের ভাল চরিত্রে দেখানো হচ্ছে। হিন্দু ধর্মগুরুদের সবসময় খল চরিত্রে দেখানো হয়ে থাকে। তারা ভণ্ড, খুনি, সন্ত্রাসী, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী, ধর্মনিরপেক্ষতা নষ্টকারী নষ্টবুদ্ধি সম্পন্ন। অন্যদিকে মসজিদ মাদ্রাসার মাওলানা ইমাম সাহেবরা ধার্মিক, পরোপকারী, উদার, ধর্মনিরপেক্ষ ইত্যাদি। তো স্বাভাবিকভাবেই আমার হিন্দুত্ববাদী বন্ধুদের নিকট বজরঙ্গীর কাহিনী জেনে মহাখুশি মনে সিনেমাটি দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করি। কিন্তু সম্পূর্ণ ছবিটি দেখে আমার 'হিন্দুত্ববাদী'বন্ধুদের জন্য করুণা হচ্ছিল। কেন? বলছি...
কবির খান পরিচালিত বজরঙ্গী ভাইজান সিনেমার প্রধান চরিত্র পবন কুমার (সালমান) এবং ৬ বছরের এক পাকিস্তানী বোবা মেয়ে শিশু শাহিদা। শাহিদা পাকিস্তান কর্তৃক জবরদখল কৃত কাশ্মীরের বাসিন্দা। বোবা মেয়ের কথা ফেরাতে শাহিদার মা তার মেয়েকে নিয়ে ভারতে যায় মাজারে মানত করতে। মানত শেষে পাকিস্তান ফেরার পথে অসাবধানতা বশত শাহিদাকে ভারতে ফেলে রেখে চলে যায় তার মা। এরপর শাহিদাকে আশ্রয় দেয় পবন কুমার। পবন হনুমানজীর ভক্ত। তাই সবাই তাকে বজরঙ্গী বলে ডাকে। পবনের বাবা আরএসএস এর কর্মী। বাবার মৃত্যুর পর পবন দিল্লি চলে যায়। সেখানেই তার সাথে দেখা হয় শাহিদার। শাহিদা পাকিস্তানি জেনেও পবন তাকে তার পরিবারের নিকট পৌঁছানোর জন্য প্রতিজ্ঞেয় হয়। অবশেষে নানান প্রতিকূলতা পেরিয়ে পবন তার প্রতিজ্ঞা পূরণ করে। ছবিতে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছে কারিনা কাপুর 'খান'।
সিনেমা দেখার আগে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছিল, বলিউডের প্রথা ভেঙে এমন একটা চরিত্র কে কেন প্রধান চরিত্রের রূপ দেওয়া হল? ছবির শুরুতেই তার উত্তর পেলাম। আমার 'হিন্দুত্ববাদী'বন্ধুরা সালমানের মুখে হনুমান চল্লিশা শুনেই খুশি ছিল। কিন্তু সিনেমার নেপথ্যের উদ্দেশ্য হনুমান চল্লিশা পাঠ শোনানো নয় বরং মুসলিমদের প্রতি এবং পাকিস্তানের প্রতি হিন্দুত্ববাদীদের সহানুভূতি জাগানো। মনে রাখতে হবে, ভারতে মুসলমান সম্প্রদায় সংখ্যালঘু। যতদিন তারা সংখ্যালঘু থাকবে ততদিন হিন্দুদের সহানুভূতি ছাড়া বেঁচে থাকা তাদের জন্য কঠিন হবে। তাই পবন চরিত্রে এমন কাউকে দেখানো হল যারা ঘোরতর পাক বিরোধী হিসাবে পরিচিত। পিকে ছবিতে আমরা দেখেছিলাম কৌতুকের ছলে একাধারে লাভ জিহাদ, পাকিপ্রীতি এবং হিন্দুধর্মের অবমাননা। এবারে বজরঙ্গী ভাইজানে দেখা গেল আবেগের সুড়সুড়ি দিয়ে অসাম্প্রদায়িকতার নামে পাকিস্তান প্রীতির উৎসাহ। এছাড়া পিকে সিনেমা সমালোচনার সম্মুখীন হওয়ায় কবির খান সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হিন্দুদের বোকা বানিয়েছে। "বাহুবলী" কে টেক্কা দিতে গেলে হিন্দুবিরোধীতা করলে চলবে না তার জানা ছিল। ছবির প্রধান উদ্দেশ্য, হিন্দুত্ববাদীদের মুসলমানদের প্রতি সহানুভূতিশীল করা এবং তাদের ধর্মের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। শুরুতে পবনকে দেখা যায়, তার মুখে সর্বদা জয় শ্রীরাম ধ্বনি। সে মসজিদ কিংবা মাজারে পা রাখতে সংকোচ বোধ করছে কিন্তু শেষে দেখা গেল হনুমান ভক্ত পবন ইমাম সাহেবের উদারতা দেখে মন থেকে তাকে সালাম জানাচ্ছে। এমনকি পরম ধার্মিক পবন নিজের ধর্ম ভুলে শাহিদার জন্য মাজারে গিয়ে মানত করছে।
সকলে নিশ্চয় বলবেন, এটা মানবতাবাদী সিনেমা। হিন্দু-মুসলমান ঐক্য চায়। পাকিস্তান না হয় খারাপ কিন্তু ঐ নিষ্পাপ মিষ্টি মেয়েটির কি দোষ? হ্যাঁ ঠিক। কিন্তু আপনি যখন বোবা শাহিদার মামা মামা বলে চিৎকার শুনে আবেগে চোখের জল ফেলছিলেন তখন পাঞ্জাবে একদল পাকিস্তানী জঙ্গি ঢুকে নিরপরাধ জনগণের হত্যায় মেতেছিল। এভাবেই শাহিদারা পবনদের টুপি পরিয়েছে এবং পরিয়ে চলেছে!
অসাধারণ লিখেছেন। আমিও এমনটিই ভেবেছিলাম। আপনার লেখায় ক্লিয়ার আইডিয়া পেলাম। ধন্যবাদ।
ReplyDeleteYou wellcome
ReplyDelete